শিরোনাম
শিক্ষিত মানুষ, অশিক্ষিত মন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৮, ১৮:৪৫
শিক্ষিত মানুষ, অশিক্ষিত মন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি তখন একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতেন। তিনি বাড়ির দরজার কাছে এসেই আমার বাবার নাম ধরে ডাকতেন। বাবা দরজা খুলেই অসম্ভব ভক্তিসহকারে তাঁকে সালাম করতেন। বাবা বলতেন, তিনি আমাদের দাদা হন। আমাদেরকেও তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করার নির্দেশ দিতেন। একসময় তিনি আমাদের অতি আপনজন হয়ে ওঠেন।


বাবা একদিন বললেন, দাদা মাধ্যমিক স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি বাবার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। ভালো বাংলা ইংরেজি জানেন। স্কুল টাইমের বাইরে তিনি বাবাকে প্রচুর সময় দিয়ে একেবারে হাতেকলমে বাংলা-ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলেছিলেন। তিনি বাবাকে খুব স্নেহ করতেন। এখন অবসরে আছেন। তাই বাবার সাথে এবং আমাদের সাথে গল্প করতে আসেন। বাবাও তাঁদের বাড়িতে যেতেন।


দেখতে দেখতে আমি এইসএসসি পাস করি। একদিন দাদা আমার কাছে আমি কী করতে চাই জানতে চাইলেন। আমি দাদাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছার কথা জানাই। আমার কথা শুনে দাদা বললেন, "মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোনো প্রয়োজন নাই।"


দাদার কথা শুনে আমি প্রথমে মনে করেছি তিনি আমার সাথে দুষ্টুমি করছেন। আমিও দুষ্টুমির ছলে বললাম, দাদা কী বলেন!


এবার তিনি তাঁর আসল রূপ প্রকাশ করলেন। বললেন, "মেয়েদের আসলে পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়া লাগে না। বাজারের লিস্ট লেখার জন্য এর বেশি দরকার নাই। মেয়েরা করবে সংসার। মেয়েদের চাকরিও হারাম।"


তাঁর কথা শুনে তাঁর প্রতি আমার এত বছরের শ্রদ্ধাবোধ নিমিষেই উবে গেল। আমি বোবা হয়ে গেলাম এই ভেবে যে, একজন শিক্ষক কী করে এমন কথা বলতে পারলেন! আমি তাঁর সাথে তর্কে যাইনি এবং আর কোনোদিন তাঁর মুখোমুখিও হইনি। বাবা বা কাউকে এই কথা জানাইনি। আমি চাইনি পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রতি বাবা বা আর কারো মনে অশ্রদ্ধা জন্ম নিক।


আমাদের সেই দাদা মারা গেছেন অনেক বছর আগে (আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন)। আজ মনে হচ্ছেে, আমার মেধাবী বাবার জায়গায় যদি মেধাবী কোনো নারী হতো, তাহলে তিনি কোনোদিনও পড়াতেন না। কারণ একটাই, মেয়ে মানুষের বেশিদূর পড়ালেখার দরকার নাই!


আমাদের এই ঘুণেধরা সমাজে দাদার মতো শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই! আবার এসবের নেতৃত্বে কিছু কিছু গুণধর নারীও আছেন। তারা মনে করেন, নারীশিক্ষা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। তারাই আবার চিকিৎসা নেয়ার সময় নারী চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা নেন না! শিক্ষার আলো তাদের কালিমাময় অন্তরকে পরিষ্কার করতে পারেনি। শিক্ষিত হয়েও তারা এখনো অন্ধকারযুগের মানসিকতাই লালন করে!


আফরোজা লিলি-র ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com