শিরোনাম
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সমবায় সমিতি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৮, ১৬:৩৫
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সমবায় সমিতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ সমবায় সমিতি হিসাবে কথিত ‘বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতি’ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে অবস্থিত। মহেশখালী চ্যানেলের তীরে সমিতির প্রধান অফিসকে আবর্তন করেই পরে গড়ে উঠেছে বদরখালী ইউনিয়ন সদর দপ্তর। চকরিয়া সুন্দরবনের অংশ বদরখাল ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতি’।


এই সমিতিটি প্রতিষ্ঠা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী কালে। সে সময়ে এদেশের কৃষক ছিল সামন্ত শোষণের শিকার। বিশেষ করে মুসলমান কৃষকদের অবস্থা ছিল আরও করুণ। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের অসহায় কৃষকদের কল্যাণ চিন্তায় এগিয়ে আসেন বঙ্গীয় মুসলিম রেনেসাঁ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার আনোয়ারুল আজিম, খান বাহাদুর আব্দুস সাত্তার, মৌলভী আব্দুল হক দোভাষ, রাহাত আলী চৌধুরী, এখলাছুর রহমান প্রমুখ। তাঁদের চেষ্টায় ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম কৃষক সমিতি লি.।


এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অসহায় কৃষকদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পটিয়ার মাওলানা নূরুল হক ও মাওলানা এখলাছুর রহমান। এ ক্ষেত্রে সমবায় আন্দোলনকে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেন তাঁরা। তাঁদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালেই গঠিত হয় চট্টগ্রাম ভূমিহীন সমবায় সমিতি। মাওলানা নূরুল হকের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ১৯২৮ সালের ৬ আগস্ট ১৫২০৮ (বন) নম্বর ক্যালকাটা গেজেট নোটিফিকেশনমূলে চৌহদ্দি নির্ধারণপূর্বক কক্সবাজার মহকুমার চকরিয়া থানার বদরখালী মৌজার সম্পূর্ণটাই ভূমিহীন মুসলমান কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য ছেড়ে দেয়।


সে সময় বন বিভাগের অধীন বদরখালী মৌজার জমির পরিমাণ ছিল মোট ৩৯১০.৪০ একর। সমবায়ী মুসলমান কৃষকদের আবাদে উৎসাহ দিতে সরকার জমির খাজনা ১০ বছরের জন্য মওকুফ করে দিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে সমগ্র বদরখালী মৌজা নিয়ে বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতি নিবন্ধিত হয়। সমবায় সমিতির প্রতি সদস্যকে ১০(দশ) একর করে চাষের জমি দেয়া হয়।


বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাকালে সদস্য ছিল ২৬২ জন। ২০০০ সালে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০০ জনে। বদরখালী ইউনিয়নের সকলেই সমিতির অন্তর্ভূক্ত। সমিতির সদস্যদের মধ্যেকার যে কোনো বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি শক্তিশালী সালিস বোর্ড রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্যদের ফৌজদারি মামলা নিয়ে বলতে গেলে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়নি।


বদরখালী ইউনিয়নের সব জমি সমিতির নামে বন্দোবস্তকৃত। লবণমাঠ ও চিংড়ি ঘের ইজারা দিয়ে সমিতির বেশ আয় হয়। বরাদ্দকৃত জমি সমিতির সদস্যগণ বংশপরম্পরায় ভোগদখল করে আসছেন।


সমিতির জমি থেকে স্কুল, কলেজ, সিনিয়র মাদরাসা, জুনিয়র মাদরাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, শ্মশান ইত্যাদির জন্য জমি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও সমিতির অধীনে জমির পরিমাণ মোট ৩৭৭৪.০৯ একর রয়েছে বলে রেকর্ডদৃষ্টে দেখা যায়। সমিতির অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে একটি কলেজ, দুটি হাই স্কুল, একটি জুনিয়র হাই স্কুল, একটি সিনিয়র মাদরাসা, একটি দাখিল মাদরাসা, ১১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি এবতেদায়ী মাদরাসা, ২৭টি মসজিদ, ৩৪টি মক্তবসহ মোট ৮৩টি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারের দেয়া অংশ বাদে অবশিষ্ট টাকা সমিতির ফান্ড থেকে বহন করা হয়ে থাকে।


সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ জন। তাদের বেতন সমিতির ফান্ড থেকে দেয়া হয়। বদরখালী ইউনিয়নের ছাত্র-ছাত্রীদের সুদমুক্ত দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাঋণ দেয়া হয়ে থাকে। দোতলা বিরাট ভবনে সমিতির অফিস রয়েছে। অফিস ভবনে একটি রেস্ট হাউজ এবং পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। পাশেই গড়ে উঠেছে একটি বিরাট বাজার। বাজারের পাশ দিয়ে চ্যানেলের উপর নির্মিত বিশাল ব্রিজটি কক্সবাজার জেলার মূল ভূমির সাথে দেশের একমাত্র পার্বত্য দ্বীপ মহেশখালীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।


শতাব্দীপ্রাচীণ এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটির মত নিরবচ্ছিন্নভাবে একটি ইউনিয়নের সমগ্র অধিবাসীর অংশ গ্রহণে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে সুফল ভোগ করে আসার নজির আমাদের সমাজে খুব বেশি কি আছে? বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতি তাই অবশ্যই বাংলাদেশের গর্ব।


জয়নাল হোসেনের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com