শিরোনাম
ছোট দেশ, বিশাল অগ্রগতি
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৮, ১৭:৫৭
ছোট দেশ, বিশাল অগ্রগতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চায়না, আমেরিকা, জার্মানি কিংবা জাপান - এরা কিন্তু এমনি-এমনি এতো সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে পরিণত হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধে জাপান ও জার্মানি তো সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। অথচ এরা এখন পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশগুলোর অন্যতম!


তো, এতো কম সময়ে এরা কিভাবে এতো সমৃদ্ধ হয়ে গেল?


এর কারণ হচ্ছে, তারা সঠিক পরিকল্পনা করেছে এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করেছে। এই পরিকল্পনার একটা মূল অংশ'ই ছিল, তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে। হয়েছেও তাই।


এরা এদের পড়াশুনা এবং গবেষণার মান এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, দুই দিন পরপরই এখন নতুন সব টেকনলজি উদ্ভাবন করে আর সেই টেকনলজির স্বত্ত্ব বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে।


মাত্র ৯০ লাখ জনসংখ্যার দেশ সুইডেন পুরো পৃথিবীতে বিখ্যাত তাদের মানবাধিকার এবং ওয়েলফেয়ার সিস্টেমের জন্য। তো এরা এদের দেশের জনগণকে এতো সুযোগ-সুবিধা দেয় কি করে? এদের অর্থনীতি কিভাবে এতো সমৃদ্ধ হলো?


এতো বিশাল একটা দেশ, অথচ জনসংখ্যা মাত্র ৯০ লাখ! এরপরও এরা উন্নত হয়েছে, কারণ এরা জ্ঞান-বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়েছে। এতো কম জনসংখ্যার একটা দেশ, অথচ এরাই পুরো পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার দিয়ে থাকে। কারণ, এদের মাঝেই কেউ ডিনামাইট উদ্ভাবন করেছে, কেউ রেঞ্জ উদ্ভাবন করেছে, কেউ পেস-মেকার!


আমি এখন যে দেশে আছি, সেই এস্তনিয়া; যাদের জনসংখ্যা মাত্র ১২ লাখ! সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশটার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। খেয়ে-না-খেয়ে চলার মতো অবস্থা। অথচ এই দেশটাই এখন পুরো পৃথিবীতে "ই-কান্ট্রি" হিসেবে পরিচিত!


এদের অর্থনীতি বেশ ভালো হয়ে গিয়েছে। এরা এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ন্যাটো'র সদস্য। এদেশের মানুষ অনলাইনে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। এখানে আমরা এমনকি সিগনেচার করি ডিজিটালি, কোনো পেপার-পেন্সিলের প্রয়োজন হয় না, এরা স্কাইপের মতো অ্যাপস উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত।


এই দেশে এমনকি আপনি ই-রেসিডেন্ট পর্যন্ত হতে পারবেন বাংলাদেশে থেকেই। অর্থাৎ আপনি থাকবেন বাংলাদেশে কিন্তু আপনার একটা ই-রেসিডেন্স পারমিট থাকবে, যে পারমিট দিয়ে আপনি দূর থেকেই ব্যাংক অ্যাকাউণ্ট খুলতে পারবেন এখানে, এমনকি আপনার কম্পানির রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন সেখানে বসেই মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটে এবং বাংলাদেশে বসেই রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য করে বেড়াতে পারবেন!


দেশটি নিজদেরকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, এখন পুরো পৃথিবীতে তাদের একটা ব্র্যান্ড হয়ে গিয়েছে "ই-কান্ট্রি" হিসেবে।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মাত্র ১২ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তনিয়া ১৯৯১ সালে স্বাধীন হবার পর মাত্র ২৭ বছরে কি করে এতো উন্নত হয়ে গেল?


এর কারণ হচ্ছে, স্বাধীন হবার পর এদের তাদের প্রথম পরিকল্পনাই ছিল তারা আইটি সেক্টরে এগিয়ে যাবে। যেহেতু জনসংখ্যা কম, তাই সেই জনসংখ্যাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে কম জনসংখ্যা হলেও সেটা কোনো সমস্যা না হয়। বাস্তবে হয়েছেও তাই।


মাত্র ১২ লাখ জনসংখ্যার একটা দেশ, অথচ এদের দুই-দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সেরা ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে আছে! অথচ চিন্তা করে দেখুন ১৭ কোটি জনসংখ্যার আমাদের দেশের কোনো ইউনিভার্সিটিকে হাজারের মাঝেও খুঁজে পাওয়া যায় না! যাবে কী করে, শিক্ষকরা তো ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে!


আমরা বাংলাদেশিরা কেন এগুচ্ছি না? আমাদের কোন জিনিসটা বেশি আছে? নিশ্চয় জনসংখ্যা। এখন এই জনসংখ্যাকে তো আর আমরা চাইলেই একদিনে কমিয়ে ফেলতে পারব না। তাহলে আমাদের কি করা উচিত?


এই মানুষগুলোকে যে করেই হোক কিছুটা হলেও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা এখন মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি করি। কিন্তু এদের বেশিরভাগই অদক্ষ।


সমস্যা হচ্ছে পৃথিবী খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর কিছু দিন পর মধ্যপ্রাচ্যও আমাদের কাছ থেকে অদক্ষ মানুষজন নেবে না। আজকাল অতি সামান্য কাজ করতে হলেও এসব দেশে কম্পিউটার'সহ অন্যান্য দক্ষতার দরকার হয়।


আর কেবল বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে না, দেশের মানুষগুলোকে এমনভাবে দক্ষ করতে হবে, যাতে তারা দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। সেজন্য আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে সেভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।


আমরা স্বাধীনতার এতো বছর পরও খুব একটা দ্রুত এগুচ্ছি না, কারণ আমাদের সেই অর্থে কোনো পরিকল্পনা ছিল না, কিংবা থাকলেও সেই পরিকল্পনাগুলো কিছু দিন পরপরই পরিবর্তন হয়!


এসএসসি পরীক্ষায় কখনো এমসিকিউ, তো কখনো রিটেন! কখনো সৃজনশীল, কখনো আবার অন্য কিছু! এতো কিছুর পরও যদি পড়াশুনাটা ঠিকমতো হতো!


ছেলেপেলে পরীক্ষা দেয় নকল করে! বাবা-মা, শিক্ষকরা আবার নকল করতে অনেককে সাহায্যও করে! এ এক অবাক করা অবস্থা! ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে নকল করে কিংবা প্রশ্ন ফাঁস করে! আর ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বাদ দিয়ে ব্যস্ত রাজনীতি আর নিজেদের ফায়দা নিয়ে!


স্বাধীনতার পর খেয়ে-না-খেয়ে চলা মাত্র ১২ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তনিয়া এখন পুরো পৃথিবীতে পরিচিত তাদের আইটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য; এদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে ক্রমাগত অবদান রেখে চলেছে।


আর ১৭ কোটির জনসংখ্যার আমরা স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও কেবল দেশ-বিদেশে নানা কনফারেন্স-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। কিন্তু তা থেকে নেয়া শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারছি না। আর যাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকরা নানা রঙের দলে বিভক্ত হয়ে ক্রমাগত রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে!


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবারতা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com