শিরোনাম
বঙ্গবন্ধু ও ‘কাজী পেয়ারা’র কাজী সাহেব
প্রকাশ : ১৪ মে ২০১৮, ১৬:৫৫
বঙ্গবন্ধু ও ‘কাজী পেয়ারা’র কাজী সাহেব
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশে ‘কাজী পেয়ারা’ কে না চেনে? এ পেয়ারা যার নামে, সেই বরেণ্য কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার নামও শিক্ষিত মানুষমাত্রেই জানেন। কিন্তু কেউ কি জানেন, কৃষিবিজ্ঞানের এ মহান মানুষটির সঙ্গে মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কী সম্পর্ক ছিল? সে অকথিত কাহিনীই আজ বলবো।


১৯৪৭ সালের কথা। কাজী এম বদরুদ্দোজা তখন তেজগাঁও বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং একমাত্র ছাত্রাবাসের প্রিফেক্ট। প্রিফেক্টের অনেক দায়িত্বের মধ্যে একটি হচ্ছে রাতে ছাত্ররা যার যার কক্ষে ঠিকঠাকমতো অবস্থান করছে কিনা তা দেখা। সেটি যাচাই করার জন্য প্রিফেক্ট রাত ১০টার দিকে ছাত্রাবাস ভিজিটে যান।


এক রাতে ভিজিটে গিয়ে হলের একটি সিটে নির্ধারিত ছাত্রের পরিবর্তে অন্য এক ভদ্রলোককে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে ফিরে যাবার সময় সিটের ছাত্র নূরুল হক চৌধুরীকে (কালু চৌধুরী) বারান্দায় পেয়ে কাজী বদরুদ্দোজা জিজ্ঞাসা করেন, কালু তোমার সিটে যে শুয়ে আছেন এই ভদ্রলোকটি কে?


কালু চৌধুরী একটু অবাক হয়ে বললেন, কেন, তুমি শেখ মুজিবুর রহমানকে চেন না?


প্রিফেক্ট বললেন, তা তো চিনি। কিন্তু তিনি এখানে কেমন করে?


কালু চৌধুরী ও কাজী বদরুদ্দোজার কথোপকথন শুনে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ভাই সমস্যা হলে...।


নূরুল হক চৌধুরী কালুর সে-রাতের অতিথিই পরবর্তীকালের বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা। এ ঘটনা থেকে সহজেই অনুমেয়, তেজগাঁও কৃষি ইনস্টিটিউটের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক কেমন ছিল।


আরেকটি ঘটনা। বর্তমান ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেট এলাকার যেখানে পুলিশ বক্স তার পাশে যে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ভবন অবস্থিত সেখানে স্বাধীনতার পরপরই সরকারের অনুমোদনে বেসরকারি উদ্যোক্তারা একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কৃষির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই এলাকা কৃষি সেক্টরেরই প্রয়োজন। এখানে পাঁচ তারকা হোটেল হলে কৃষি কার্যক্রমের সমূহ ক্ষতি হবে - বিষয়টি অনুধাবন করে ড. কাজী বদরুদ্দোজা তা ঠেকানোর বিষয়ে উদ্যোগী হন। তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে যান। তাঁকে ভালোভাবে বুঝান। বঙ্গবন্ধুও ড. এম বদরুদ্দোজার কথা ধৈর্যসহকারে শুনে এবং গুরুত্ব অনুধাবন করে হোটেল নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে আসেন। সে স্থানেই আজ নজরকাড়া বিএআরসি ভবন দাঁড়িয়ে আছে।


ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ১৯৭৩-৭৯ সালে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক আর ১৯৭৯-৮৪ সালে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর পদবি ছিল চেয়ারম্যান, ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের আওতা বৃদ্ধির কারণে কৃষিমন্ত্রী হন তার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, আর প্রতিষ্ঠান প্রধানের (সমন্বয়কারীর) পদবি হয় নির্বাহী চেয়ারম্যান)।


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী পেয়ারার এক নতুন জাত উদ্ভাবন করে তাঁর নামে নামকরণ করেন ‘কাজী পেয়ারা’। বর্তমানে বাংলাদেশে কাজী পেয়ারা একটি জনপ্রিয় ফল।


এদেশের প্রধান ফসল ছিল ধান ও পাট। তিনি গম ও ভুট্টা আবাদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য সুইডেন গিয়ে ডিপ্লোমা নিয়ে আসেন এবং গম আবাদ বৃদ্ধিতে গবেষণা করেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় কৃতী কৃষিবিজ্ঞানী ড. এস এম হাসানুজ্জামানের প্রচেষ্টায় দেশে গমের আবাদ সম্প্রসারণ হয়।


কাজী এম বদরুদ্দোজা সারা জীবন কৃষি গবেষণায় কাজ করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইপসা (পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট পুনর্গঠনে সহায়তা করেন। বিদেশেও (ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান) কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় সহায়তা করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ তাঁকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু বিনয়ের সাথে তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।


সামরিক শাসনামলে কৃষিশিক্ষাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও কৃষি শিক্ষা তাঁর প্রচেষ্টায় কৃষি মন্ত্রণালয়েই রয়ে যায়।


বর্তমান বাংলাদেশে কৃষিব্যবস্থার যে পরিকাঠামো দেখা যায় বলতে গেলে তার প্রায় পুরোটাই তাঁর হাতে গড়া। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন।


ন্যাশনাল এমিরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা কৃষিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ন্যাশনাল এমিরিটাস সায়েন্টিস্টসহ বহু পদক লাভ করেন। সর্বশেষ ২০০২ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।


দেশের কৃষির বাতিঘর হিসাবে খ্যাত সর্বজনশ্রদ্ধেয় ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ৯১ বছর বয়সে এসেও দেশের কৃষি ও কৃষকের জন্য একজন নিবেদিতপ্রাণ কৃষিবিদরূপে অবদান রেখে চলেছেন।


জয়নাল হোসেনের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com