শিরোনাম
এপিসোড-ঈশা:‘অর্ডার ওভার-রুলড’
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৫৭
এপিসোড-ঈশা:‘অর্ডার ওভার-রুলড’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জানতে চাওয়াটা আমার এখতিয়ারভুক্ত কিনা জানি না, তবে ফেসবুক ইউজার হিসেবে পুরো তালগাছটাই যে আমার, তাতে কোন সন্দেহ নেই।


রাত ১২টার পর একটা নতুন তারিখ আসে। সে হিসেবে গতকাল রাত ১২টার পর হয়েছিল ১১ এপ্রিল, ২০১৮। কোটা সংস্কারবাদীদের দুর্দান্ত প্রতাপে কাঁপছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। একের পর এক ফেসবুকের পাতা উল্টাচ্ছি আর দেখছি ঘটে যাওয়া মিনিটগুলোর আপডেট। হঠাৎই ভাইরাল হতে দেখা গেল একটা ভিডিও ক্লিপ। কবি সুফিয়া কামাল হলের মোর্শেদা খানম নামের একজন সাধারণ ছাত্রীর আহাজারি। তার পায়ে বাঁধা ব্যান্ডেজ, কন্ঠে কান্না, আর তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে উৎসুক ছেলেমেয়ের দল। মোর্শেদা খানম একই হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ইশরাত জাহান ঈশার বিরুদ্ধে নালিশ করছেন সাধারণ ছাত্রীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অত্যাচার ও অমানবিক আচরণের কথা বলে। তিনি যখন নালিশ করছিলেন, তখন বোঝা গেল কেউ অনেকটা প্ল্যান করেই তা ভিডিওতে ধারণ করছিলেন। প্ল্যানমাফিক এজন্য বললাম যে, পাশ থেকে একটা ছেলে বা পুরুষ কন্ঠ মোর্শেদা খানমকে বার বার জোর করছিলেন একটা নাম বলার জন্য। কয়েকবার বলার পরে মোর্শেদা খানম কন্ঠে জড়তা নিয়ে একটি নাম উচ্চারণ করলেন, ‘ইশরাত জাহান ঈশা’, ছাত্রলীগের সভাপতি, কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা।


এই ভিডিও ক্লিপটি যখন ভাইরাল হয়ে গেল, তখন বাতাসে বাতাসে উড়ছিল আরো একটি কথা যে, ইশরাত জাহান ঈশা অর্থাৎ ছাত্রলীগের সভাপতি কোন একটি মেয়ের নাকি পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। বিভ্রান্ত্রি ছড়ালো এভাবে যে, সম্ভবত মোর্শেদা খানমের পায়ের রগই কেটেছিল সে, যেহেতু তার পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। পরে জানা গেল যে, মোর্শেদা খানম সভাপতি ইশরাত জাহান ঈশার রুমের কাচের জানালায় লাথি মেরে ভাঙ্গতে গিয়ে পা কেটেছিলেন। যাই হোক, গুজবে শুরু হয়ে গেল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিষদগার এবং শিবিরের সাথে তুলনা করা। খুব স্বাভাবিকভাবে আমার মতো অনেকেই বিব্রত হচ্ছিলেন ঘটনার আকষ্মিকতায়। ঘটনাটির উপর এমনভাবে রং চড়ানো হলো যে, কোটা সংস্কারবাদীদের প্রতিহত করতে সরকার ছাত্রলীগকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে এবং তারা ধরে ধরে নিরিহ ছাত্রীদের পায়ের রগ কাটছে। এটা আরো ফুলে ফেপে উঠলো যখন ফেসবুকের কিছু স্বনামধন্য সেলিব্রিটি এবং বয়োজৈষ্ঠরা এতে হাওয়া দিলেন।


ঘটনা যখন দ্রুত গতিতে ডালপালা ছড়াচ্ছিলো, তখন বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি ভাইরাল হওয়া শুরু করলো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এস আর সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরকৃত একটি চিঠি যেখানে তারা লিখেছেন (প্রথম ছবিটা দেখুন) যে, ‘কেদ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ইশরাত জাহান ঈশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো’। মোটাদাগে এই হলো ঘটনা। এবার পুরো ঘটনাটিকে পোস্টমর্টেম করা যাক।



প্রথমত. আজকে দেখা গেল যে, অভিযোগকারী মোর্শেদা খানম যাকে সবাই সাধারণ একজন গোবেচারী-প্রতিবাদী ছাত্রী হিসেবে গতকাল দেখেছিল এবং সহমর্মী হয়েছিল, সম্ভবত সে মোটেও তা ছিল না। জানতে পারলাম, সে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখার ছাত্রলীগের ৭ নম্বর সহসভাপতি (দ্বিতীয় ছবিটি দেখুন)। অর্থাৎ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সে যে সব অভিযোগ ও অনুযোগ অন ক্যামেরায় উত্থাপন করেছিলেন, তা সর্বোতভাবে শুধু মিথ্যাই নয়, একই সাথে গর্হিত অপরাধও। কারণ দলীয় অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল বা মতের অমিলের কারণে অন্যের কাছে নালিশ দেয়ার বা প্রেস কনফারেন্স করার সুযোগ বা নজির নাই। অথচ তিনি তা করেছেন। অত্থাৎ মোর্শেদা খানম অত্যন্ত সজ্ঞানে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন’, যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সোহাগ-জাকির তা মনে করেননি। তারা দোষ দেখেছেন ‘ঈশাতে’।



দ্বিতীয়ত. সোহাগ এবং জাকির, এক ঘরে বা জায়গায় না থেকেও কিভাবে গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, তা আমার বোধগম্য নয়। এটা শুধুই সম্ভব পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ধরণের একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা চিঠি আগে থেকেই তৈরি রাখলে। প্রশ্ন করতে বিব্রত হচ্ছি, তারা কি আসলেই তাই করেছেন? তারা কি মোর্শেদা খানমের নাটকীয় ভিডিও ক্লিপের ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন? ভিডিও ধারনকারী কে ছিল? খুঁজে দেখতে হবে!


তৃতীয়ত. ছাত্রলীগ কোন দল নয়, একটা সংগঠন। অথচ চিঠিতে ‘দল’ বলা হয়েছে, যা চিঠির অরিজিন্যালিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। কারণ দলের সর্বোচ্চ দুইজন নেতা নিশ্চয়ই সংগঠনকে দল বলবেন না। এছাড়াও আমার জানা মতে, যদি অভিযোগটি হয় সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে, তাহলে নিয়মানুযায়ী ঈশাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থণের সুযোগ দেয়ার কথা। অপরাধের গভীরতাকে ‘মারাত্মক’ হিসেবে বিবেচণা করলে তাকে ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করার কথাও ভাবা যেতো। কিন্তু ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রথমে তাকে দাগী আসামি বলা হলো এবং তারপর তড়িঘড়ি করে ছাপানো প্যাডে বহিস্কারাদেশ দিয়ে দেয়া হলো, ব্যাপারটা কেমন না! সবকিছু কেমন যেন অস্বাভাবিক এবং অসুন্দর মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, পদাধীকার বল এবং সংগঠনের গঠণতন্ত্রের দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার জনিত কারণে ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’ দু'জনই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, যা সত্যিই দুঃখজনক বললে অত্যুক্তি করা হবে না।


তারপর আজ সারাদিন ঈশাকে জনসমক্ষে পশুকায়দায় যেভাবে অপমান এবং তার ভিডিও করে ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে, তা কোনভাবেই ছাত্রলীগের সম্মানকে উন্নত করেনি। বরং বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়নের যে পলিসি, নারীকুলের তাতে অবিশ্বাসই শুধু বাড়বে না, ভয়ও জন্ম নেবে ততোধিক। রাজনীতি, সমাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিতে নারীর অবমূল্যায়ন ও অপমান তাদের শুধু পিছু হটতেই উৎসাহিত করবে, যা ‘ঈশা-এপিসোডে’ হতে দেখেছি। দীর্ঘদিনের কোন সহকর্মী বা সোহাগ-জাকিরদের কাউকেই ঈশার পাশে মানবিক অর্থেও দেখা যায়নি। ঈশাকে যা দেয়া হয়েছে, তা মানবতা ও ছাত্রলীগের আদর্শকে পদদলিত করে। বাতাসে ভাসমান ভেলার গুঞ্জনে এখন শোনা যাচ্ছে, ইশরাত জাহান ঈশার বিরুদ্ধে সাধারণ এবং ফৌজদারি অপরাধের যে অভিযোগগুলো গতকাল আনা হয়েছিল, তা সত্য তো নয়ই, শুধুই সত্যের অপলাপ বা মিথ্যা!


সমাপনীতে একথাই বলা যেতে পারে, ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা দেখেছি এবং শুনেছি, তাকে শুধুই একটা উচ্চ মার্গীয় সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ঘটনাটির সুস্থ্ তদন্ত হওয়া উচিত এবং ঈশা নির্দোষ প্রমানিত হলে তাকে সসম্মানে সংগঠনের পূর্বপদে ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে আমি করি। ঈশা-এপিসোডের অন্যান্য অপরাধীদেরও সাজা নিশ্চিত করতে হবে, তাতে সে যে-ই হোক!


সাব্বির খানের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com