শিরোনাম
নিজের অধিকার নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করতে হয়
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০১৮, ২০:০৭
নিজের অধিকার নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করতে হয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২৭ মার্চ, ২০১৮। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেইলি রোডে সিগনালে বসা। হঠাৎ করেই পাশের গাড়িটি আমাদের গাড়িতে লাগিয়ে দিল। গাড়ির বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রানা সাথে সাথেই গাড়ি থেকে নেমে ওই গাড়ি সাইড করতে বলে। কিন্তু সেই গাড়ির লোকজন ন্যূনতম 'সরি' তো বললই না, বরং সিগনাল ছাড়ার সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং উল্টো অভিযোগ করে, আমাদের গাড়িই নাকি ওদের গাড়িতে লাগিয়েছি।


পরে আমি অনেক কষ্টে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে ওই গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াই। ওই গাড়িতে বসা প্রায় ৬ ফুট ঢ্যাঙ্গা মোটাসোটা এক লোক (সরি, ভদ্রলোক বলতে পারছি না..কাহিনী শুনুন) উল্টো চিৎকার করে আমাকে বললো, ‘অভদ্রের বাচ্চা’।


জীবনে কাউকে গালি দেইনি, শুনিওনি। তখন আমার মেজাজ চরমে। চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাকে অভদ্রের বাচ্চা বললেন? দোষ করলেন আপনারা, এখন উল্টো আমাদের গালিগালাজ করছেন!


ওই লোকের সঙ্গীটি এবার গলা ফাটিয়ে বলতে থাকলো, এখানে হাজারো পুরুষ মানুষ, আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে কথা বলছেন কেন?


এরই মধ্যে রাস্তায় কয়েক শ' মানুষ ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। আমি বললাম, আপনি ''সরি'' না বলা পর্যন্ত এই আমি গাড়ির সামনে দাঁড়ালাম। পারলে আমার উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যান। আপনি মেয়েমানুষ বলে আমাকে হেয় করে কথা বলছেন, আপনি মেয়ে মানুষের পেট থেকে হন নাই? আজকে গিয়েই বাসা থেকে আপনার মা, বউ, মেয়ে সবাইকে বের করে দেবেন। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়েমানুষ হয়ে এখন অফিস করে আসছি। কখনো কখনো মেয়েমানুষ হয়েও অফিসে পুরো শিফট নিজে একা চালাই।


তখন ওই লোক বলে, আপনি এমন করছেন কেন..এটা কী আপনার গাড়ি?


আমার পাল্টা কথা, কম্পানির গাড়ি হলেই ওটায় লাগিয়ে দেয়া যায়, আর আরেক জনের সন্তান হলে তাকে মেরে আপনি চলে যাবেন, বলবেন সে তো আপনার নিজের সন্তান না।


এবার আর জবাব খুজে না পেয়ে চুপ মেরে গেল বলদটা। ততক্ষণে আমাদের চারপাশ ঘিরে অনেক পুলিশ। আমি পুলিশকে বললাম, গাড়ির হিসাব পরে হবে, আগে ওনার অভদ্র আচরণের জন্য সবার সামনে 'সরি' বলতে হবে।


শুনলাম পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হচ্ছে, এই জ্যাম অনেক দূর পর্যন্ত গেছে। তাড়াতাড়ি রাস্তা ফ্রি করতে।


শুনলাম, একটু দূরে গিয়ে পুলিশ বলছে, স্যার একজন ভদ্রমহিলার সাথে আরেক গাড়ির লোক অভদ্র ব্যবহার করেছে, এজন্য উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এর বিচার চাইছেন।


পরে গাড়ির মালিক আসে। কয়েক ঘণ্টা বাক-বিতণ্ডা চলে। ওই গাড়ির চালক পুলিশকে বুঝানোর চেষ্টা করে, আমাদের গাড়িই গিয়ে তাদের গাড়ির সাথে লাগানো হয়েছে। আমি বললাম, কেউ কি ইচ্ছে করে আরেক জনের গাড়ির সাথে লাগিয়ে নিজের গাড়ির ক্ষতি করবে?


তারপর বললো, আমরা নাকি ওভারটেক করার চেষ্টা করেছি। বললাম, পুরো রাস্তা গাড়িতে ঠাসা, ওভারটেকের সুযোগ কই ?


এরপর পুলিশ ওই ড্রাইভারকে বলেন, চুপ থাকেন। আপনি কোনো যুক্তিই সঠিকভাবে দিতে পারছেন না।


এরপর কোনো পক্ষকেই শান্ত করতে না পারায় গাড়ি দুটো থানায় নিয়ে যেতে বলে। আমিও তাতে রাজি। আমাদের লাইসেন্স দিতে পারলেও তাদের মনে হলো, কাগজপত্রে গণ্ডগোল ! শেষমেষ ওই গাড়ির মালিক গাড়ির কাজ করিয়ে দিতে রাজি হন।


সবাই যখন যাব যাব করছে তখন আমি বলি, আমার বিচার তো পেলাম না। পরে সবাই গিয়ে ওই গাড়ির লোকজনকে নিয়ে এসে আমার কাছে ''সরি'' বলেন।


সাঈদা যোহরা শাম্মীর ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com