শিরোনাম
বাদী আছেন বিবাদী নেই
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৮, ১৯:৩২
বাদী আছেন বিবাদী নেই
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

“ছোট ভাই, তুমি তো খুউব জেদি!”


ঢাকার আদালতপাড়ার বারান্দায় দাঁড়িযে বলেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী তিনি। একইসাথে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। রীতিমতো ডাকাবুকো। যা বলেন, করে ছাড়েন। সেরকম একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী কি-না ইচ্ছে পূরণ না হওয়ায় বিরক্ত।


আমার বিরুদ্ধে দু’খানা মামলা চলছে লতিফ সিদ্দিকীর। একটার বাদী তিনি নিজে, ঢাকার আদালতে। আরেকটি বাদী তারই ঘনিষ্ঠ কালিহাতী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, টাঙ্গাইলের আদালতে। দুই মামলারই এক নম্বর আসামী আমি। অন্য আসামীরা হলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহজাহান সরদার ও দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রকাশক জাকারিয়া চৌধুরী।


ঢাকার আদালতে নিজে উপস্থিত থেকে মামলা করেন লতিফ সিদ্দিকী। দেশের খ্যাতনামা একজন আইনজীবী নিয়োগ করেন এবং সবরকম নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে উপর্যুপরি চাপ প্রয়োগ করে বিচারকের মুখ থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা শব্দটি বের করাতে বাধ্য করেন।


মুহূর্তেই খবর হয়ে যায়। বেশ কযেকটি টেলিভিশনের স্ক্রলে প্রচারিত হতে থাকে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর করা মানহানির মামলায় ঢাকা টাইমস সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহজাহান সরদার টেলিফোন করেন। বলেন, শোন ভাই, সাবধানে থাকো একটু। লতিফ সিদ্দিকী কিন্তু খুব ত্যাড়া।


আমি বললাম, শাহজাহান ভাই, আমি রেডি। এই মামলায় কারাগারে গেলে আমার কোনো ক্ষতি নেই, বরং কারাগারের অভিজ্ঞতাটা জানা থাকবে।


শাহজাহান ভাই বলেন, হেঁয়ালি করো না। পুলিশের সাথে একটু কথা বলো।


মামলার পরদিন সকালে শাহজাহান ভাইকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে তার অফিসে সাক্ষাত করলাম। সৌজন্য বিনিময় হলো, মামলার প্রসঙ্গ টানিনি কোনো পক্ষই। তবে শাহজাহান ভাই বোধহয় খানিকটা আশ্বস্ত হলেন।


উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলাম আমি। আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলেন। এরপর যথারীতি নিম্ন আদালতে হাজিরা পর্ব চলছে। মাঝপথে খবর এলো, চা-মিষ্টি খেয়ে মন্ত্রীর সাথে আমরা যেন মিটমাট করে নিই।


আমার মন সায় দেয় না। নাকচ করলাম প্রস্তাব। বললাম, মামলা লড়বো, শেষটা দেখি।


টাঙ্গাইলে যেদিন হাজিরা থাকে হয় আগের দিন গিয়ে থাকি অথবা ভোরে ঢাকা থেকে রওনা হই। এক প্রকার গা সওয়াই হয়ে যায় আমার। শাহজাহান ভাইয়েরও।


ঢাকায় মন্ত্রীও হাজিরা দেন। ওই সময়টা হরতাল-অবরোধ চলছিল থেমে থেমে। পেশাগত কারণে আমরা কখনো কখনো ঢাকার আদালতে গরহাজির থাকতে বাধ্য হই। আদালতে মন্ত্রী আসেন, আমরা নেই - এটা কয়েকবার ঘটে। মন্ত্রী একপর্যায়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন।


একবার হাজিরায় বাদী (মন্ত্রী) আছেন, আমরাও আছি। বাদীর আইনজীবী বিচারককে উদ্দেশ করে বললেন, “বাদী নিজে কিছু বলবেন।”


অনুমতি মিললো। মন্ত্রী বলে চলেছেন, বাদী হয়ে আমি তো নিজেই হয়রানির মধ্যে। আমি আদালতে আসি, সাংবাদিক আসামীরা আসেন না। কিভাবে এই মামলা চলবে আমি তো সন্দিহান। এভাবে কি মামলা চলে?


রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন তিনি। বলেন, সোমবারে মামলার তারিখ পড়ে, মন্ত্রীসভার বৈঠক। আমি সেখানে না গিয়ে আদালতে আসি। দেখি আসামীরা নাই। এটা কেমন কথা? আমিই হয়রানির শিকার এখন। এই মামলা আমি আর চালাবো না।


বিচারককে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, আপনি ব্যবস্থা করেন।


বিচারক বললেন, তাহলে তো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।


মন্ত্রী বলেন, তাই করবো।


বিচারক খাস কামরায় চলে গেলেন। দু’পক্ষের আইনজীবীরা বাকি ব্যবস্থা করলেন। একটি আপসনামা তৈরি হলো। দুই পক্ষই স্বাক্ষর করলাম আমরা।


আমাকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী শুধু বললেন, ছোট ভাই, তোমার তো খুউব জিদ!


আমি নিশ্চুপ থাকলাম। মনে মনে শুধু বললাম, সত্যের জয় হবে নিশ্চয়ই।


ঢাকার মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলো। আর এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইলের মামলাও নিষ্পত্তি হলো।


কত যে ঘটনা! এভাবেই লড়েছি। লড়বো শেষ পর্যন্ত ইনশাল্লাহ্।


আরিফুর রহমানের দোলনের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com