আদিতে ই-কার ও উ-কার রয়েছে এমন কিছু পুরানো শব্দের বানানে বহু আগেই ই-কারের স্থলে এ-কার এবং উ-কার স্থলে ও-কারের ব্যবহার চালু হয়ে গেছে। দু’প্রকার বানানই শুদ্ধ। তবে পুরানো আমলের সাহিত্যে পুরানো বানান ও সাম্প্রতিক কালের সাহিত্যে নতুন বানান দেখা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই অসাবধানতা বা অজ্ঞতার কারণে এ ধরনের শব্দ এখনো পুরানো বানানেই লিখে যাচ্ছি অথবা পুরানো ও নতুনের মিশ্রণে বাক্য রচনা করছি। যেমন নিচের এ দুটো বাক্য-
১. “বিড়ালটা ভিতর থেকে বেরিয়ে দেয়ালের উপর বসলো।”
২. “বেড়ালটা ভিতর থেকে বেরিয়ে দেয়ালের ওপর বসলো।”
প্রথম বাক্যে আদিতে ই-কার বা উকার-যুক্ত ‘বিড়াল’, ‘ভিতর’ ও ‘উপর’ – এ তিনটে শব্দ রয়েছে, এগুলোর বানান পুরানো বা সাধু ধারার। আর এই শব্দগুলোর পরিবর্তিত বা চলতি বানান হলো - ‘বেড়াল’, ‘ভেতর’ ও ‘ওপর’। ফেসবুকে এ ধরনের বিচ্যুতি আমরা অনেকেই প্রতিনিয়ত করে থাকি। যেহেতু আমরা আধুনিক যুগের লেখক হতে চাই, সেহেতু আমাদের লেখায় নতুনকেই জায়গা করে দেবো। আর দ্বিতীয় বাক্যটির মতো নতুন ও পুরানোর মিশ্রণও দেবো না। এখন থেকে আমরা লিখবো -
“বেড়ালটা ভেতর থেকে বেরিয়ে দেয়ালের ওপর বসলো।”
এ ধরনের আরো কিছু শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সতর্ক থাকবো। যেমন (বন্ধনীবদ্ধ শব্দগুলো পরিবর্তিত বা চলতি) :-
আদিতে ই-কারযুক্ত শব্দ :- শিয়াল (শেয়াল) ফিরত (ফেরত) পিছন (পেছন), বিয়ান (বেয়ান), সিলাই (সেলাই), শিকড় (শেকড়), শিকল (শেকল), ভিজা (ভেজা), মিঠাই (মেঠাই), নিকাব (নেকাব), কিতাব (কেতাব), তিপ্পান্ন (তেপ্পান্ন), পিতল (পেতল), সিয়ানা (সেয়ানা), কিচ্ছা (কেচ্ছা),পিয়াজ (পেয়াজ), বিনামা (বেনামা), ফিরা (ফেরা)* পিটানো (পেটানো)*, শিখা (শেখা)*, শিখানো (শেখানো)*, লিখা (লেখা)*, লিখানো (লেখানো)*, গিলা (গেলা)* গিলানো (গেলানো)*, ঘিরা (ঘেরা)*, টিপা (টেপা)*, টিপানো (টেপানো)*, ফিরা (ফেরা)*, ফিরানো (ফেরানো)* ইত্যাদি।
আদিতে উ-কারযুক্ত শব্দ :- কুর্তা (কোর্তা), খুরমা (খোরমা), ধুঁয়া (ধোঁয়া), দুচালা (দোচালা), ফুলা (ফোলা), মুছা (মোছা)*, শুনা (শোনা)*, উড়া (ওড়া)*, উড়ানো (ওড়ানো)*, গুছানো (গোছানো)*, উঠা (ওঠা)*, ছুটা (ছোটা)*, ছুটানো (ছোটানো)*, ঘুরা (ঘোরা)*, ঘুরানো (ঘোরানো)*, ঘুচা (ঘোচা)*, ঘুচানো (ঘোচানো)*, ডুবা (ডোবা)*, ডুবানো (ডোবানো)* ফুটা (ফোটা)*, ফুটানো (ফোটানো)* বুঝানো (বোঝানো)* ইত্যাদি।
এ ধরনের শব্দ খুব একটা নেই। মনে রেখে চর্চা করলেই সারবে।
উপর্যুক্ত তারকা-চিহ্নিত ক্রিয়াপদগুলোর পরিবর্তিত বা চলতি বানান শুধু আমরা সকর্মক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করবো। অকর্মক ক্রিয়াপদ লিখতেও আমরা অহরহ ভুল করি; এ বিষয়ে আর একদিন আলোচনা করা যাবে।
আবুল কাইয়ুমের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]