আখাউড়া স্থলবন্দরে বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগী সরকার
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:০৯
আখাউড়া স্থলবন্দরে বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগী সরকার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সংকটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া আমদানি বাণিজ্যে ধীরগতির কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণও কমছে সম্ভাবনাময় এ বন্দর থেকে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ১৬ টন ভাঙা পাথর, পেঁয়াজ ও আদা। মূলত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নিজেদের সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকায় আমদানি বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের অনীহা তৈরি হয়েছে। ফলে ক্রমাগত কমছে রাজস্ব আহরণ।


তবে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগী বাংলাদেশ সরকার। পণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়কটি চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার কাজ চলছে পুরোদমে। প্রায় ৫১ কলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়কটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশেরও বেশি। মহাসড়কটি চালু হলে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এছাড়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও নেওয়া হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প।


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তুলনামূলক কম খরচে পণ্য আমদানি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ও লাভবান হতে থাকেন। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হয়ে সরবরাহ হতো উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে।


তবে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নিজ দেশ থেকেই পণ্য সংগ্রহ করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক ও তুলাসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যা আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।


তবে বন্দরের ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ না থাকলেও পণ্য আমদানির মাধ্যমে আখাউড়া স্থলবন্দরটিকে চাঙা করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে যেসব পণ্য আমদানির অনুমদোন রয়েছে তার অধিকাংশেরই চাহিদ কম। এছাড়া এসব পণ্য ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। যার ফলে আমদানি খরচ মিটিয়ে ভালো মুনাফা করা যায় না।


এছাড়া বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় পণ্য ছাড়করণে বিলম্ব হয়। এতে আমদানিকারকদের গুণতে হয় অতিরিক্ত মাশুল। যার ফলে আমদানি খরচ আরও বেড়ে যায়।


বর্তমানে গবাদি পশু, মাছের পোনা, রাসায়নিক সার, ভাঙ্গা কাঁচ, ফ্লাই অ্যাশ, মার্বেল চিপস, আগরবাতি, জিরা ও সাতকড়াসহ অর্ধশতাধিক পণ্য আমদানির অনুমতি আছে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। যার বেশিরভাগেরই চাহিদা কম এবং ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। তবে চলতি বছরের মে মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীরা তাদের কাঙ্খিত কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমতি পেতে লিখিত আবেদন জানান। তবে ব্যবসায়ীদের সেই আবেদনের বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। ফলে বন্দর দিয়ে নিয়মিত পণ্য আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা।


আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত থেকে ৪ হাজার টন ভাঙা পাথর, ১১ দশমিক ৩ টন পেঁয়াজ এবং ৪ দশমিক ৭৫ টন আদা আমদানি হয়েছে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২০ হাজার ৩৭৮ দশমিক ১৫ টন গম, পাথর, ভুট্টা ও পেঁয়াজ। ওই অর্থবছর শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পায় প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।


এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয় ৯৬ হাজার ৫২০ টন চাল, গম, আদা ও পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আসে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। মূলত রপ্তানিমুখী হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের কোনো লক্ষ্যমাত্রা থাকে না।


বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দরে একটি ট্রাকইয়ার্ড, একটি ওয়্যারহাউজ ও একটি ওয়েট স্কেল এবং ছোট্ট একটি অফিস ভবন রয়েছে। তবে আমাদিন বাণিজ্য পুরোদমে চালু করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শুল্ক স্টেশনে আমদানি পণ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পণ্য আমদানিতে ধীরগতির প্রধান কারণ হলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকা। আমদানি বাণিজ্যে গতি আনতে হলে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য (নিষিদ্ধ ব্যতিত) আমদানির সুযোগ দিতে হবে। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যখন বাজারে যে পণ্যের চাহিদা থাকবে, সেই পণ্য আমদানি করে মুনাফা করতে পারবেন। এতে সরকারও রাজস্ব পাবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের আমদানি বাণিজ্যে অনীহা কাটবে না’।


আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামরুল পারভেজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যে কয়েকটি পণ্য আমদানির অনুমোদন চেয়েছেন, সেগুলোর বিষয়ে এখনও কোনো নিদর্শেনা আসেনি। আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণও কমছে। তবে বন্দরের রাজস্ব বাড়াতে আমরা সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমদানি পণ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখন যেসব পণ্য আমদানি হচ্ছে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য তেমন কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ছে না’।


এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ওই প্রকল্পের আওতায় নতুন আরেকটি ওয়্যারহাউজ, দুটি ওয়েট স্কেল, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড এবং অফিস ভবন নির্মিত হবে। এছাড়া চারলেনের জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে। এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী হবে’।


বিবার্তা/নিয়ামুল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com