লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে মাছ-মুরগীর দাম
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪৫
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে মাছ-মুরগীর দাম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

লাগাম ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে চলতি সপ্তাহে সবজির বাজার অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে মুরগির দাম। চাল, ডাল, সবজি, মাছ ও মাংস (গরু, খাসি) বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এসে যেন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।


শুক্রবার (২৫ আগস্ট) কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও রায়সাহেব বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।


লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। হুহু করে বাড়ছে দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে শাক-সবজির দাম। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ ঘাটতিই এর মূল কারণ।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পেঁপে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, কহি ৫০ টাকা ও বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


এছাড়া প্রতিকেজি মুলা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৮০ টাকা ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিপিস লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা ও বাধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।


আকমল নামে এক বিক্রেতা জানান, বাজারে শাক-সবজির যোগান খুবই কম। এতে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে দাম। সরবরাহ না বাড়লে, দাম কমার সম্ভাবনা নেই।


আর ক্রেতারা জানান, অধিক মুনাফার লোভে দাম বাড়াচ্ছে বিক্রেতারা। নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট চলছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।


সাব্বির হোসাইন নামে এক ক্রেতা বলেন,বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও; ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।


তবে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে কাঁচা মরিচের দামে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে মরিচের দাম নেমেছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।


বিক্রেতারা জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এতে দাম কমতির দিকে। খুব শিগগিরই দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।


এদিকে ঊর্ধ্বমুখী মাছের বাজার। দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি মাছেরই। আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। আর বাজারভেদে প্রতিকেজি চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত।


বিক্রেতারা জানান, এবার ইলিশ কম ধরা পড়ছে; তাই দামও বাড়ছে। তাছাড়া বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় অন্যান্য মাছের দামও বাড়তি।


রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ৫শ’ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


বাদশা বেপারী নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে বর্তমানে মাছের আমদানি তুলনামূলক কম। তবে মাছের সরবরাহ বাড়া শুরু হলেই দাম পড়ে যাবে।


রাজধানী ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি টেংরা মাছ ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়, দেশি মাগুর ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, শোল ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, আইড় ৮৫০ টাকা, পুঁটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও নদীর পাঙাশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৪০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


ক্রেতারা জানান, বাজারে মাছের দাম অনেক বেশি। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে। তবু দাম ঊর্ধ্বমুখী।


অস্থির হয়ে উঠেছে মুরগির বাজারও। প্রতিকেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া লাল লেয়ার ৩২০ থেকে ৩৫০ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়।


বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে কিছুটা বেড়েছে দাম। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের বিক্রেতা ইমন বলেন, বাজারে মুরগির পর্যাপ্ত যোগান নেই। তাছাড়া পাইকারি পর্যায়েও দাম বেড়েছে। ফলে খুচরা বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী মুরগির দাম।


আর ক্রেতারা জানান, মুরগির বাজারে আবারও সিন্ডিকেট শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়।


তবে দাম কমেছে ডিমের। বাজারভেদে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৪ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।


এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৮০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৬০ টাকায়।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে চালের দাম। বাজারে প্রতিকেজি আটাইশ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ টাকা ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।


বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা কম। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের কামাল বাণিজ্যলায়ের মালিক মো. কামাল বলেন, ভারতের চাল রফতানির নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। বাজারভেদে ১ থেকে ২ টাকা দাম হেরফের হতে পারে। চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে।


কারওয়ান বাজারের মের্সাস মতলব টেডার্সের মালিক আবু রায়হান জানান, দেশে চালের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট না করলে খুব শিগগিরিই দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাজারে কিছুটা বেড়েছে জিরার ও গোল মরিচের দাম। তবে স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য মসলার দাম। প্রতিকেজি জিরা ১ হাজার ৮০ টাকা, গোল মরিচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪৩০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০, কাঠবাদাম ৭৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল ডাল, আটা ও ময়দার দাম। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর নতুন দাম নির্ধারণের পর চিনি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।


তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।


এর আগে রবিবার (১৩ আগস্ট) প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৫৪ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২৩ টাকা কমিয়ে ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।


আর রবিবার (১৩ আগস্ট) প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।


নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।


আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com