রমজানের চড়া ঝাঁজ কমেনি মোংলার কাঁচা বাজারে
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:১৫
রমজানের চড়া ঝাঁজ কমেনি মোংলার কাঁচা বাজারে
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রমজানের কড়া ঝাঁজ কমেনি মোংলার প্রধান কাঁচা বাজারে। নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে রমজানের সময়ের বৃদ্ধির দামেই। এছাড়া কোন কোন পণ্য বিক্রি হচ্ছে রমজানের দামের চেয়েও বেশি দামে। এনিয়ে ক্রেতা সাধারণ ক্ষুদ্ধ ও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


বুধবার (২৬এপ্রিল) পৌর শহরের প্রধান বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে শশা/খিরাই বিক্রি হয়েছে ৮০টাকা কেজিতে। এখন রমজানের পরও শশা/খিরাইর সেই একই দাম রয়ে গেছে। কাঁচা মরিচের দাম রমজানে ছিল ১শ টাকা, আর এখনও তা বিক্রি হচ্ছে ওই দামেই। আর আলুর কেজি ছিল যেখানে ২৫টাকা কেজি, তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫/৪০টাকায়। রমজান মাসের তুলনায় আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫টাকা। তবে আলুর দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে বেগুনের দাম একটু কমে এসেছে ৪০টাকায়। লাউ ও পুইশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০/৪০টাকা কেজিতে। বাজারে নতুন উঠেছে কাঁকরোল যা বিক্রি হচ্ছে ৮০টাকা কেজি দরে। পটল, ঢেড়শ, ঝিঙ্গা, কুশি, দন্দুল ও কুমড়াসহ অন্যান্য কাঁচামাল রয়ে গেছে রমজান মাসের সেই চড়া দামেই।


বাজার করতে আসা গাজী তৈয়বুর রহমান বলেন, রমজানে যে দাম ছিল এখনও সেই একই দামে বিক্রি হচ্ছে তরিতরকারী। আর আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, রমজান মাসে বাজারে মালামালের যে দাম ছিল এখন তার চেয়ে দাম আরো বেড়েছে। সামসুউদ্দিন ও মো. বাসারসহ স্থানীয় ক্রেতারা বলেন, সিন্ডিকেট আড়ৎদারদের কারণে এ বাজারে দাম বেশি। এ বাজারে চাষীরা আসলে তাদেরকে বসতে দেয়া হয়না। কারণ তারা কম দামে সবজি বিক্রি করে থাকেন। তারা বাজারে মালামাল নিয়ে আসলে সিন্ডিকেট চক্র মালামাল কেড়ে নিয়ে ইচ্ছামত কোন রকম দাম দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে দেন বলেও অভিযোগ তাদের। আর বিক্রেতারা বলেন, আড়ৎ থেকে যে দর দেয়া হয় তার চেয়ে সামান্য কিছু বাড়িয়ে আমরা বিক্রি করে থাকি। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করে আসছি।
পৌর শহরের নতুন বাস ষ্ট্যান্ডে সপ্তাহে দুইদিন কাঁচা মালের হাট বসে। সেখানে পৌর শহরের প্রধান কাঁচামালের বাজারের তুলনায় দাম কম। তাই একটু দূরে হলে দরিদ্র শ্রেণী পেশার মানুষ যান সেখানে। একই শহরের হাট-বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামাল। এছাড়া দিগরাজ, চিলা, বাঁশতলা, মিঠাখালী, মোল্লারহাট, চটেরহাট, মাদুরপাল্টা হাট অন্যান্য হাটগুলোতে মোংলার প্রধান বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম কম।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোংলা কাঁচা বাজারকে ঘিরে রয়েছে ৮/১০জনের সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের মুল হোতা আলম তালুকদার। তার সাথে রয়েছেন কবির, ফিরোজ, জামাল, নাসির, রফিক, সুমন, জাহিদ। এ চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন পুরো বাজার। সিন্ডিকেট চক্রটি খুলনা, যশোরের সাতমাইল, আঠারোমাইল, কেশবপুর ও সাতক্ষীরার তালা, শাহাদাতপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য কিনে আনেন। এরপর ওই সকল জায়গা থেকে যে দামে পণ্য কিনেন তার চেয়ে কেজিতে ১০/১৫/২০টাকা বেশি লিখিয়ে মোংলায় সিন্ডিকেট আড়ৎতে এনে তার উপরও আবার নতুন করে কেজিতে ১০/১৫টাকা বাড়িয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। আর বিক্রেতারা সিন্ডিকেট চক্রের আড়ৎ থেকে যে দামে পণ্য কিনেন তারাও কেজিতে ক্ষেত্র বিশেষ ৫/১০/১৫টাকা বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। সিন্ডিকেট চক্রটি বিভিন্ন এলাকা থেকে যে পণ্য আনেন তা বাজারে একদিনে না ঢুকিয়ে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ঢুকিয়ে বাজারে কাঁচামালের সংকট তৈরি করে রাখেন। আর এ সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেটটি তাদের অর্থ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।


মোংলা কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলম তালুকদার বলেন, এসব উড়ো কথা, আপনাদের লেখালেখির থাকলে লিখতে পারেন।


উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটি অন্যতম সদস্য ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরআলম শেখ বলেন, বাংলাদেশে একবার যার দাম বাড়ে তার দাম কমার নজীর নেই। প্রশাসনে যারা আছেন তাদের নজরদারীর অনুরোধ জানাচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হওয়ায় দরিদ্র মানুষের ভোগান্তী বেড়েছে, এছাড়া ক্রয় ক্ষমতার সাধ্যের বাহিরে চলে গেছে। কাজেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার মনিটরিং জরুরী।


সিন্ডিকেট চক্র ও বাজারের দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি সম্পর্কে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. রহমান বলেন, সিন্ডিকেট যারা করে তাদের দৌরাত্ম এতো বেশি বেড়েছে যে, সিন্ডিকেট নেই এমন একটা জায়গা নেই। এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম শেষ করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার এবং আমার যে দায়িত্ব আছে তা শতভাগ পালন করবো। আর যার নির্বাহী ক্ষমতা আছে জরিমানা করার তার সাথে (পৌরসভার প্রধান নির্বাহী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) আমি এবিষয়ে আলাপআলোচনা করবো এবং অনুরোধ করবো যাতে অচিরেই বাজার মনিটরিং করাসহ এ দুরাবস্থা থেকে জনগণ যাতে বাঁচতে পারে সেই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।


উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাস বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/ জাহিদ/ মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com