জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার মানোন্নয়নে অঞ্চলভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ২০:৫৭
শিক্ষার মানোন্নয়নে অঞ্চলভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অঞ্চলভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করার নির্দেশনা দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি বলেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়য়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। সেটি যেন আরও উন্নত করা হয় এবং প্রতিনিয়ত যেন শিক্ষক প্রশিক্ষণটা থাকে। তাছাড়া আমাদের ৮টি বিভাগ আছে। আমরা অঞ্চলভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা করেছি। ৮টি বিভাগে ৮টি সেল গঠন করে অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্তি থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দেখা এবং সমাধান করা।


নতুন কারিকুলাম কোথায় কী আছে- সেগুলো বিবেচনা করা, সেইভাবে পরামর্শ করা- এই বিষয়টার দিকে আমরা নজর দিতে পারি। তাতে আমাদের শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আরও দক্ষতা অর্জন করবে। এখন তো সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই কানেকশন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছি। কাজেই ব্রডব্যান্ড কানেকশন এখন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে। সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। কাজেই অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ- এই যোগাযোগের মাধ্যমেই কিন্তু প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা যোগসূত্র করে সেখানকার কার্যক্রম চালালে সেটার মানটা আরও উন্নত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’


১৬ জুলাই, রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ২০২৩’ এ প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।


অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, অসচ্ছল ও মেধাবী ১০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত ১০টি শিক্ষা সংক্রান্ত উন্নয়ন কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশনজট নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিবার। উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের কলেজসমূহে অধ্যয়ন করছে। নতুন পরিকল্পনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা, গবেষণা, আইসিটি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়সমূহের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধাও অনেক বৃদ্ধি করেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট দূর হয়েছে। অসচ্ছল মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের যে পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি। দুঃখের বিষয়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারে এসে এটি বন্ধ করে দেয়। যাহোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আবার বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যোমে চালু করেছে। আমি এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’


শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে গড়ে উঠতে হবে। আমরা ১০০টি শিল্পাঞ্চল করেছি। সেখানে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনশক্তি দরকার। আন্তর্জাতিকভাবেও বহু দেশ দক্ষ জনশক্তি চায়। কাজেই সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, দেশের মানুষ সার্বিকভাবে যতো উন্নত হবে, নিজের জীবনটাও আরও উন্নত হবে। কাজেই সেইভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ- সেই বাংলাদেশকে যেন ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা করতে পারি সেই কারিগর হিসেবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তুলবে সেটাই আমরা আশা করি। আসুন সকলে মিলে আমাদের দেশটাকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলি।’


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাঙালির ভাষা, সাহিত্যের যে সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতির গভীরতা ও বিস্তৃতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের যে অনমনীয় চেতনা, ত্যাগ ও সংগ্রামের যে ইতিহাস এবং সমাজের বহুত্ববাদিতা, মানবিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আবহমান সুর তাকে হৃদয়ে, মননে এবং জীবনচর্চায় ধারণ করে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠবে। একই সাথে কায়মনে শাশ্বত বাঙালি হবে, হবে বিশ্ব মানব- এ আমাদের প্রত্যাশা।


এই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সমগ্র শিক্ষা পরিবার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি আলোকিত, গণতান্ত্রিক, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন, অগ্রগামী, আধুনিক ও উদার সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন প্রতিটি মানুষের মুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে। জীবন জুড়ে তিনি সে সংগ্রামই করেছেন। আপনিও পিতার মতো করে বাঙালির মঙ্গল কামনায় নিজেকে উজাড় করে উৎসর্গ করছেন। আপনার এ অকৃত্রিম ভালোবাসা, মমতা ও আলিঙ্গন-সাহচার্য ও পরামর্শে বাংলাদেশ আমাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্নে পৌঁছবেই। সে পথ চলায় প্রয়োজন আপনার প্রজ্ঞাময় জীবনের অভিভাবকত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনা।’


সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাসী আজ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায়। তারা দেখছে কীভাবে আত্মমর্যাদার পদ্মাসেতু নির্মাণ করে সমতার কূটনীতিতে যেতে হয়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামীর পথ চলায় প্রতিটি বাঙালি গৌরব করে শেখ হাসিনা ঘোষিত সমতার কূটনীতিকে সশ্রদ্ধার সঙ্গে অভিবাদন জানাবে। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে একটি সমতার কূটনীতি কেমন করে বিশ্বময় দাঁড় করানো যায়।


প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নির্দেশনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে সকল সেবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করেছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা মানবিক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটছি। আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে অচিরেই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করতে সক্ষম হবো আমরা।’


অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ১০টি শিক্ষা সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন সেগুলো হচ্ছে- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত অ্যাকাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টার প্ল্যান, আইসিটি মাস্টার প্ল্যান, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, টুঙ্গিপাড়ায় আর্কাইভ, মিউজিয়াম ও উন্মুক্ত গ্যালারি প্রতিষ্ঠা, ১২টি দক্ষতাভিত্তিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, ১৯টি শর্ট কোর্স, মূল ক্যাম্পাসে ৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রাম, আইসিটি কোর্স অবশ্যপাঠ্যকরণ, জেনোসাইড- লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ প্রোগ্রাম, এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, গ্রন্থ রচনা প্রকল্প এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান।


বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার।


সারাদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২২৫৭টি কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিশিষ্ট রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com