শিরোনাম
যে কোনো অনুষ্ঠানের উপযুক্ত মঞ্চ ‘দীপনতলা’
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৪৬
যে কোনো অনুষ্ঠানের উপযুক্ত মঞ্চ ‘দীপনতলা’
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দীপনপুর নামটি শুনলেই মনে হয় কোনো এক এলাকার বা স্থানের নাম।কিন্তু না, এটা কোনো এলাকা বা স্থানের নাম নয়।এটা একটা অত্যাধুনিক বুকশপ ক্যাফের নাম।ভালোবাসার মানুষের স্বপ্ন পূরণে জন্ম হয়েছিল দীপনপুরের।আর সেই স্বপ্ন পূরণে, স্বামীর অম্লান স্মৃতিকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি।স্বপ্নটা আজ তার পূরণও হয়েছে।


ডা. রাজিয়া রহমান জলির স্বপ্ন পূরণের গল্প শুনতে যেতে হবে আরো অনেক পেছনে।



২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর।সেই দিন রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন।তবে দীপনের মৃত্যুর পর স্বামীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে আসেন তার প্রেয়সী ও সহধর্মিণী ডা. রাজিয়া রহমান জলি।হাল ধরেন জাগৃতি প্রকাশনীর।শুধু তাই নয়, দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে আজীবন ধরে রাখতে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী ‘বুকশপ ক্যাফে দীপনপুর’।


২০১৭ সালের ১২ জুলাই ফয়সল আরেফিন দীপনের ৪৫তম জন্মদিনে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে প্রায় ২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দীপনপুর নামের এই বুকশপ ক্যাফের যাত্রা শুরু হয়।নতুন প্রজন্মকে আলোর ভুবনে টেনে আনার লক্ষ্যে ‘আলোকের এই ঝরণাধারায় ধুইয়ে দাও’ স্লোগানে দীপনপুরের কার্যক্রম শুরু হয়।



দীপনপুরে রয়েছে নীরিবিলি পরিবেশ।অন্যদের বিরক্ত না করে বই পড়া যায়।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহের প্রতিটি দিন, এমনকি সব ছুটির দিনও দীপনপুর খোলা থাকে।বইয়ের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে রুচিশীল খাবারের জন্য ক্যাফে ‘দীপাঞ্জলি’।এতে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন খাবার ও পানীয় পাওয়া যায়।একই সঙ্গে সমৃদ্ধ মেনুতে দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারও পাওয়া যায় সেখানে।শুধু তাই নয়, অফিস বা বাসা বাড়িতে প্রি-অর্ডারের ভিত্তিতে খাবার ক্যাটারিং ও সরবরাহ করারও রয়েছে আধুনিক ব্যবস্থা।



সভা-সেমিনার বা যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য দীপনপুরে রয়েছে ‘মঞ্চ দীপনতলা’। ১০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সেই মিলনায়তনের ভাড়া মাত্র তিন হাজার টাকা। মঞ্চ দীপনতলা মিলনায়তনটি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক যে কোনো অনুষ্ঠান, ওয়ার্কশপ, ফিল্ম-শো, সঙ্গীতানুষ্ঠান, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আবৃত্তি অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও ওই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সকল অনুষ্ঠানের যে কোনো মূল্যের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।



এদিকে দীপনপুরে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য রয়েছে আলাদা ‘শিশু কর্ণার’। সেখানে রয়েছে শিশুর মানসিক বিকাশের সহায়ক বই ও বিনোদন ব্যবস্থা। ছবি আঁকা, সংগীত, আবৃত্তি, উচ্চারণ, বানানরীতি ও বিতর্ক প্রশিক্ষণের সুযোগও রয়েছে। এমনকি প্রাচ্য ও পাশ্চ্যতের ধ্যান-সাধনার সমন্বয়ে মেডিটেশন ও যোগব্যায়ামও শিখানো হয় এই দীপনপুরে।


তরুণ প্রজন্মকে বইয়ের জগতে বিচরণের সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করাও অন্য একটা লক্ষ্য দীপনপুরের। বই পড়ে আলোকিত হয় মানুষ, তবেই কেবল অন্ধকার অপশক্তির হাত থেকে রেহাই পাবে দেশ। বললেন দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি।



জলি বলেন, বই পড়ার সাথে সাথে পাঠক যেন মানসম্পন্ন চা-কফি বা হাল্কা খাবার-দাবারও উপভোগ করতে পারেন; সেই নতুন ধারণা নিয়ে দু’বছর ধরে চলছে দীপনপুর। ক্যাফে অংশটির নাম দীপাঞ্জলি। সময়ের পরিক্রমায় যুক্ত হয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমে প্রশিক্ষণ, ছবি আঁকা, গান শেখা, আবৃত্তি, বিতর্ক, কর্মশালা, মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম। এছাড়াও দীপনপুরে ১০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘দীপনতলা’ নামের যে মঞ্চ এবং মিলনায়তন আছে তাতে গত দুবছর ধরে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশে একে একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।



দীপনপুর পরিচালনায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে জলিকে। দীপনপুরের ভাড়া, যাবতীয় বিল এবং কর্মচারীদের বেতন সংকুলানের জন্য যতটুকু অর্থের প্রয়োজন তার তুলনায় দীপনপুরের আয় অপ্রতুল। বই পড়ার অবাধ সুযোগ থাকায় বই কেনার প্রতি পাঠকের আগ্রহ কম। প্রচারণার অভাবে ‘দীপনতলা’ মঞ্চটির কথা অনেকের কাছেই অজানা।এই মিলনায়তনটি নিয়মিত ভাড়া হলে অর্থ সঙ্কট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যেত। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান লাভজনক তো হয়নি বরং একে টিকিয়ে রাখা দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়েছে।


দীপনপুর, দীপনের পরিবারের জন্য তীব্র এক আবেগের জায়গা। তবে জলির ভাষ্য, শুধু আবেগ বা আদর্শ আঁকড়ে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে দীপনপুরকে আরো বড় পরিসরে পরিচিত করতে না পারলে এতে দর্শক ও পাঠক সমাগম বাড়ানো সম্ভব না। কেবল মাত্র দর্শক ও পাঠক নিয়মিত আসলেই দীপনপুর টিকে যেতে পারবে একটি আলোকিত কেন্দ্র হিসেবে।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com