
একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিলো নৌকা বাইচ। সভ্যাতার বিবর্তনে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীন এ উৎসবটি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে নাটোর জেলা প্রশাসন চলনবিলের গুরুদাসপুরের বিলশা পয়েন্টে আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব। বাইচ উৎসব দেখতে বিলপাড়ের এ গ্রামে ঢল নামে দর্শনার্থীদের।
“নদী দুষন রোধ করি,নির্মল বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যে নৌকা বাইচ উৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হয় উৎসবের আমেজ।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২ টায় শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। কিন্তু সকাল থেকেই হাজার হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। নির্ধারিত দুরত্ব বজায় রেখে বিলের মাঝখানে দুই দিকে হাজার হাজার নৌকার থাকা দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছেন ওই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বাইচের নৌকাগুলো বাদ্যের তালে তালে বৈঠা মেরে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। নৌকার গতি আর মাঝি-মাল্লাদের ছন্দোবদ্ধ বৈঠা চালানোর দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। বৈঠার তালে তালে জেগে ওঠে ছন্দ-আনন্দ আর দর্শকদের উল্লাস ও করতালি আনন্দের মাত্র কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।
নাটোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ওই নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আজিম আহম্মেদ,ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান,নাটোরের পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম,গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে-জামাই আত্বীয়-স্বজনসহ অতিথিদের জন্য পিঠা-পায়েসসহ হরেক পদের খাবারের আয়োজন। উৎসবকে কেন্দ্র করে বিলপাড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানান,গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল প্রমান করে এ উৎসবটি কতটা জনপ্রিয়। বিলুপ্তপ্রায় নৌকা বাইচ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজনের চেষ্টা থাকবে।
বাইচ উৎসব দেখতে আসা সিংড়ার কতুয়াবাড়ি গ্রামের রকিব বলেন, ক’জন মিলে একটি নৌকা ভাড়া করে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। দুপুরের খাবারের আয়োজনও ছিলো নৌকাতেই। গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।
বিলশা গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, একসময় প্রতিবছর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। যা ছিলো গ্রামের মানুষের বিনোদনের অংশ। যে বিনোদন আর ঐতিহ্য হারাতে বসেছিলো। জেলা প্রশাসনের এমন আয়োজনকে স্বাগত জানাই। প্রতিবছর এমন আয়োজনের দাবী তার।
উল্লেখ্য ২ কিলোমিটার দুত্বের এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার ২১টি নৌকা নিবন্ধন করলেও ১০০ ফিট দৈর্ঘ্যের ১২টিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে মোটরসাইকেল জিতেছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির নিউ একতা এক্সপ্রেস। দ্বিতীয় হয়ে রেফ্রিজারেটর পুরস্কার জিতেছে শাহজাদপুর উপজেলার নিউ বাংলার বাঘ। তৃতীয় পুরস্কার একটি টিভি জিতেছে আল মদিনা।
বিবার্তা/জনি/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]