মৃত নারীকে আসামি করে মামলা আরডিএ কতৃপক্ষের!
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৩২
মৃত নারীকে আসামি করে মামলা আরডিএ কতৃপক্ষের!
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীতে মৃত নারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না করেই আরডিএর পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়েছে বলে মৃতের স্বজনেরা দাবি করেছেন।


মোসা: দিলারা খাতুন নামে ওই নারী মারা গেছেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর আরডিএর পক্ষ থেকে মৃত দিলারাসহ তার এক ভাই ও এক বোনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর। পরে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আরডিএর পক্ষ থেকে মৃত দিলারাসহ তার এক ভাই ও এক বোনকে আসামি করে মামলা করা হয় চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে। তবে আরডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ যাচাই করেই মামলা করা হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর মহল্লায় চন্ডিপুর মৌজার আর.এস ১০০৬ দাগে পৌনে তিন কাঠা জমির মালিক হলেন তিন সহোদর। তারা হলেন- মিজানুল ইসলাম, মোসা: ইসমত আরা ও রেবেকা সুলতানা। এই তিন সহোদরের মধ্যে মিজানুল ২ দশমিক ২১ শতাংশ, ইসমত আরা শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও রেবেকা সুলতানা শূন্য দশমিক ১৫৯ শতাংশের মালিক। এভাবে তারা বণ্টননামা দলিল করে নিয়েছেন। এই তিন সহোদরের আরেক বোন মোসা. দিলারা খাতুন মারা গেছেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তাকেও আরেক স্থানে জমির ভাগ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পারিবারিক কোনও দ্বন্দ্ব নেই। দিলারা খাতুন বাদে বাকি তিন সহোদর ১০০৬ দাগের পৌনে তিন কাঠা জমিতে যৌথভাবে পাঁচ তলার ছাদ স্যাটারিং পর্যন্ত ইমারত (ভবন) নির্মাণ করেছেন। এজন্য তারা আগেই আরডিএর কাছ থেকে এনওসি গ্রহণ, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় সব শর্তাদি পূরণ করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তবে পাঁচ তলার ছাদ স্যাটারিং পর্যন্ত ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশিষ্ট কাজ বন্ধ করে দেয় আরডিএ। পরবর্তীতে মামলা করা হয়।


মামলায় জীবিত তিন সহোদরের মধ্যে আসামি করা হয়েছে মিজানুল ইসলাম ও মোসা. ইসমত আরাকে। আর জীবিত আরেক সহোদর রেবেকা সুলতানা আসামি হননি। মামলার ২ নং আসামি করা হয়েছে মারা যাওয়া বোন দিলারা খাতুনকে। অথচ এই জমির মালিক না হওয়া সত্বেও এবং ভবন নির্মাণের সাথে কোনও সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও মৃত দিলারা খাতুনকে আসামি করার কারণ কী বা কীভাবে তাকে আসামি করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলাটির বাদী হয়েছেন আরডিএর ইমারত পরিদর্শক আরিফুল হক।


মিজানুল ইসলামের দাবি, ভবন নির্মাণ কাজের জন্য আরডিএর কাছ থেকে এনওসি গ্রহণ, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় সব শর্তাদিই পূরণ করেই আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।
আর আরডিএ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা অনুমোদিত নকশা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অনুমোদনের ১৩ নং শর্ত লংঘন করেছেন। তাই অবৈধ নির্মাণ অপসারণ না করায় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইমারত নির্মাণ কমিটির ৮৪ তম সভায় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক আরডিএ কর্তৃপক্ষ মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং চলতি ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।


তবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন পরবর্তীকালে আইন লংঘন করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আরডিএ কর্তৃপক্ষ শরীফুল ইসলাম নামে একজন অভিযোগকারীর অভিযোগ যাচাই না করেই মৃত নারীকে আসামি করে মামলা দায়ের পরিকল্পিত নাকি অনিচ্ছাকৃত ভুল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃত নারীর স্বজনেরাসহ অনেকে।


মামলা করার আগে আরডিএর পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাবও দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাদের জবাব সন্তোজনক মনে করেনি আরডিএ। ফলে পরবর্তীতে মামলা করা হয়।


অন্যদিকে অভিযোগকারী শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরডিএর কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ভবন নির্মাণকারী তিন সহোদরের একজন মিজানুল ইসলাম। ভবন নির্মাণের অনুমোদন না থাকা, প্লান ছাড়া ভবন নির্মাণসহ আরো কিছু কারণ দেখিয়ে এই অভিযোগ করেন মিজানুল ইসলাম।


তবে মিজানুল ইসলামের দাবি, শরীফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আরডিএর পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে করে প্রতীয়মান হয় যে, আরডিএ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও অযৌক্তিক ভাবে মামলা দায়ের করেছে। আর শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া আরডিএর এক ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ বলে মনে করছেন মিজানুল ইসলাম।


আরডিএর ইমরারত পরিদর্শক আরিফুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে মামলার বাদী করেছে। আমি কিছু বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে জানতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।


জানতে চাইলে আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিলারা খাতুন নামে যে নারী মারা গেছেন সেটা আমাদের জানা নেই। যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার স্বজনেরা কেন আমাদেরকে জানাননি।


তিনি বলেন, তাদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে জানালে পরবর্তীতে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com