তীব্র গরমে যে আমল করবেন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১২
তীব্র গরমে যে আমল করবেন
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। অতি তাপের কারণে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষজন। সারাদিনের তীব্র তাপপ্রবাহে শরীরের ত্বক পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফদর। সাথে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং; যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা।


গরম আসলে কোথা থেকে আসে? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে কী বলেছেন? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (সহিহ বুখারি ৫৩৬)


অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ (বুখারি ৩২৬০)


তীব্র গরমের সময়ে মুমিনদের জন্য মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। নিম্নে কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া


অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য নিজেদের পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মহান আল্লাহ অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নূহ ১০-১১)


তীব্র গরমে জোহর নামাজ দেরিতে আদায় করা সুন্নত


ভীষণ গরমের দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের সালাত কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। এ জন্য গরম বেশি পড়লে জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া সুন্নত। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম।


একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চাইলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুণরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। (সহিহ বুখারি ৫৩৯)


নফল রোজা রাখা


গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে রোজা রাখা অধিক কষ্টকর। আর রোজার উদ্দেশ্যই আত্মসংযম, যা কষ্টের মাধ্যমে অনুভূত হয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) অধিক সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় তুমি তোমার প্রচেষ্টা ও ব্যয়ের সমান পুরস্কার পাবে। (মুস্তাদরাকে হাকিম ১৭৫৩)


পিপাসার্তকে পানি পান করানো


পানি পান করানো একটি উত্তম সওয়াবের কাজ। তারমধ্যে তীব্র গরমে তৃষ্ণার্ত মানুষ বা কোন জীবজন্তুকে পানি পান করানো অধিক উত্তম। এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, পানি পান করানো। (সুনানে নাসাই ৫৪৫৬)


আরেক হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‎প্রত্যেক পিপাসার্ত প্রাণীকে পানি পান করানোতে সওয়াব আছে। (মুসনাদে আহমাদ ১৭৫৮১)


বৃক্ষ রোপন


গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বৃক্ষের ছায়ার বিকল্প নাই। বৃক্ষ রোপন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি মহান সুন্নতও বটে। বৃক্ষ রোপন, বৃক্ষের যত্ন নেয়া, পানি সিঞ্চন করা, বৃক্ষের ফল-ফলাদি পাখি বা পশু ভক্ষণ করা সবই সদকা তথা সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপন করে কিংবা ফসল উৎপাদন করে আর তা থেকে পাখি, মানুষ অথবা কোন চতুষ্পদ জন্তু কিছু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদাকাহ্ হবে। (সহিহ মুসলিম ৩৮৬৫)


শালীনতার প্রতি যত্নশীল হওয়া ও নগ্নতা-অশ্লীলতা পরিহার। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধান করেন, যা খুবই দৃষ্টিকটু ও গর্হিত কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তর বা ষাট এর অধিক শাখা আছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা। (সহিহ মুসলিম ৩৫)


গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করে ধৈর্যধারণ করা


তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই গরমকালকে গালমন্দ করেন, অযাচিত বাক্য ব্যয় করেন যা অনুচিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন, আদম সন্তান সময়কে গালমন্দ করে। অথচ আমিই সময় (নিয়ন্ত্রণ করি)। আমার হাতেই রাত ও দিন (এর বিবর্তন সাধিত হয়)। (সহিহ মুসলিম ৬০০৩)


গরম থেকে শিক্ষাগ্রহণ


দুনিয়ার সামান্যতম এই গরম আমরা সহ্য করতে পারি না। অথচ জাহান্নামের তুলনায় দুনিয়ার তাপমাত্রা কিছুই না। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে রসুল, আপনি বলে দিন, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত। (সুরা আত-তাওবাহ ৮১)


আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আরো কিছু মাধ্যম হচ্ছে- দরিদ্র আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর রাখা, গরিব-দুঃখিদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা, ঝড়-তুফানে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সাহায্য করা, পশু-পাখিকে খাবার খাওয়ানো, ঘর্মাক্ত শরীরে জনসমাগমে গমন না করা, গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখার নির্দেশ করেছে ইসলাম।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com