আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব আসে যে জাতির ওপর
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩২
আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব আসে যে জাতির ওপর
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কওমি লুত এমন এক জাতি, যাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবুজ শ্যামল এক নগরী দান করেছিলেন। অসংখ্য অগণিত নেয়ামত রাজিতে ভরপুর করে দিয়েছিলেন। তাদের কাছে প্রেরণ করেন আল্লাহর নবী লুত আ.কে। হযরত লুত আ. ছিলেন হযরত ইবরাহিম আ.-এর ভাতিজা। চাচার সাথে তিনি জন্মভূমি ‘বাবেল’ শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেনআনে চলে আসেন। আল্লাহ লুত আ.কে নবুওয়াত দান করেন।


কেনআন থেকে অল্প দূরে জর্ডান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের মধ্যবর্তী ‘সাদুম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। এ এলাকায় সাদুম, আমুরা, দুমআ, সাবাহ ও সাওয়াহ নামক কয়েকটি শহর ছিলো। তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আসতে দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা নবীর কথা শুনেনি। তারা লিপ্ত হয় এক ঘৃণিত কাজে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সতর্ক করেন। পরীক্ষা করেন। কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি। ফলে ভয়ংকর ভূমিকম্প দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।


কওমে লুতের ওপর আল্লাহর গজব


তৎকালীন ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী এক জায়াগায় এ জাতিটির বসবাস ছিল। কেন্দ্রীয় শহর ছিল ‘সাদুম’ নগরী। সাদুম ছিল সবুজ শ্যামল এক নগরী। বর্তমানে এ এলাকাকে ডেট সি বা মৃত সাগর বলা হয়। কারণ এখানে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। ফলে ভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর। শস্যে ভরপুর। এমন প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রায় বেপরোয়া করে তোলে তাদের। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে তাদের মধ্যেই সর্বপ্রথম সমকামিতার প্রবণতা দেখা দেয়।


ইসলামের দৃষ্টিতে এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। পৃথিবীতে তারাই প্রথম সমকামিতার পথ উন্মুক্ত করে। হযরত লুত আ. তাদের এ পাপকাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। আল্লাহর ভয় দেখান। কিন্তু তারা লুত আ. এর আদেশ অমান্য করে। সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, ‘হে আমার উম্মত! আল্লাহকে ভয় করো আর সঙ্গে সঙ্গে আমার অনুগত্য করো। এই আহ্বানের ফলে আমি তোমাদের থেকে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় বিশ্বের একমাত্র মালিক আল্লাহ দেবেন। (সুরা শুআরা আয়াত নম্বর ১৬৩-১৬৪)।


আল্লাহর পথে আহ্বান করে পরকালীন মুক্তি ও সুখময় জীবনের কথা বলেন লুত আ.। কিন্তু তারা নবীর কথা কানেই নেয়নি। উলটো তারা সমকামিতার মত ঘৃণিত কাজ বৃদ্ধি করে দেয়। লুত আ. তাদেরকে তাদের বিকৃত রুচি তথা সমকামিতা থেকে বারণ করেন। এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে খবর দেন। কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেন, ‘লুত আ. তার সম্প্রদায়কে ডেকে বললো হে আমার জাতি! তোমরা এমন জঘন্য অরুচিকর অশ্লীলতা শুরু করছো, তোমাদের পূর্বে পৃথিবীতে কেউ এমন রুচিহীন কাজ করেনি।


নিশ্চয় তোমরা কামভাব পূরণার্থে পুরুষের সঙ্গ গ্রহণ করছো, নিজেদের মাঝে গর্হিত কাজ করছো। (এই কথা শোনার পর) তার জাতি লুত আ.কে জবাব দেয়, যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে আমাদের ওপর গজব আনয়ন করো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এই বিপদগ্রস্ত জাতির ব্যাপারে আমাকে রক্ষা করুন। (সুরা আনকাবুত আয়াত নম্বর ২৮-২৯)।


যে কারণে তাদের উপর নেমে আসে এ ভয়ংকর শাস্তি


আল্লাহর নবী লুত আলাইহিস সালাম তাদের বারবার সমকামিতার মত পাপাচার থেকে দূরে সরে আসতে বলেছেন, কিন্তু তারা নবীর কথা না শুনে উলটো তাকে কষ্ট দেয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, তার সম্প্রদায় এ ছাড়া কোনো উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। (সুরাতুল আরাফ আয়াত নম্বর ৮২)। আল্লাহর নবীর বিরোধিতা করে তাদের পাপাচারে সহযোগিতা করতেন লুত আ.-এর স্ত্রী। এর ফলে আল্লাহ তাআলা একদিন ভোর বেলা তাদের ভয়ংকর ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করে দেন। ভূমিকম্প এতো শক্তিশালী ছিল যে তাদের পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়।


কওমে লুত এই বিকৃতি রুচির কাজে এতোটাই পাগলপারা ছিল, এই গর্হিত কাজের কোনো সময় স্থান কাল ব্যক্তি পরিচয় ছিল না। যখন যাকে পেত তার সঙ্গেই এই বিকৃতরুচির কাজ করতো।


একদিন হজরত লুত আ. এর নিকট আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা আসলো। তারা সেই ফেরেশতার সঙ্গেও এই কাজ করার জন্য দৌড়ে আসে। সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেন, লুত আ. এর নিটক ফেরেশতা আসার পর শহরবাসী খুশিতে দৌড়ে আসে।


হজরত লুত আ. বললেন, এরা আমার মেহমান, আমাকে লাঞ্ছিত করো না। মেহমানের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আমাকে দুঃখিত করও না। তারা বললো, আমরা কি আপনাকে দুনিয়াবাসীর সমর্থন করতে নিষেধ করিনি? তিনি উত্তরে বললেন, যদি তোমরা একান্ত কিছু করতেই চাও, তবে আমার কন্যারা উপস্থিত আছে। আল্লাহ বলেন, আপনার জীবনের কসম তারা নিজস্ব ভাবনায় মত্ত। (সুরাতুল হিজর আয়াত নম্বর ৬৮-৭২)।


তারা কোনোভাবেই এ মনোবাসনা থেকে বিরত হচ্ছিল না। এরপরই আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নেমে আসে। এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে দেয়। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে।


পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ বলেন, আপনি আপনার পরিবার নিয়ে শেষ রাত্রিতে চলে যান, আপনি তাদের জন্য ফিরে আসবেন না, আর আপনাদের মধ্যে হতে কেউ যেন পেছন ফিরে না দেখে। আপনারা যেখানে আদেশ প্রাপ্ত হয়েছেন সেখানে চলে যান। আমি লুতকে এই বিষয়ে জানিয়ে দিই, সকাল হলেই তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে। (সুরাতুল হিজর, আয়াত নম্বর ৬৫-৬৭)।


তাদের উপর গজবের বিবরণ মহান আল্লাহ বেশ কয়েকটি আয়াতে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, সূর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচণ্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করলো। আমি জনপদটিকে উল্টো করে দিলাম। তাদের উপর বর্ষণ করলাম কঙ্কর প্রস্তরের প্রবল বৃষ্টি। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য রয়েছে নির্দেশনাবলি। (সুরাতুল হিজর আয়াত নম্বর ৭৩-৭৫)।


আসহাবুল আইকাও ভয়ংকর ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে


আসহাবুল আইকা’ আল্লাহর নবী হযরত শুয়াইব আ. এর গোত্র। তাদের বসবাস ছিলো মাদায়েন এলাকায়। আইকা বিশাল বড় একটি গাছের নাম। তারা প্রাচীন এ গাছটির পূজা করতো। হযরত শুয়াইব আ. তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা আল্লাহর নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। ফলে আল্লাহ তাদের ভূমিকম্প ও আগুনের শাস্তি দেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, আসহাবে আইকার অধিবাসীরা ও তোব্বা সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই রসুলগণকে মিথ্যা বলেছে, অতঃপর তারা আমার শাস্তির যোগ্য হয়েছে। (সুরা ক্বফ, আয়াত-১৪)


আসহাবে আইকার বাসিন্দা জুলুম, অত্যাচারের পাশিপাশি কুফর ,শিরক ও ওজনে কম দেওয়ার মতো অপরাধে লিপ্ত ছিল। তাদের বসতি ছিলো সাদুম জাতির নিকটে। তাদের সময়কালও খুব কাছাকাছি ছিল। উভয় বসতিই আল্লাহর শাস্তিতে ভয়ংকর ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতায় ধ্বংস হওয়া সম্প্রদায়ের চিহ্ন এখনো পৃথিবীতে আছে। কিয়ামত পর্যন্ত নিদর্শন হিসেবে থাকবে। যেনো মানুষ আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থেকে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী হয়, আর আল্লাহরই ইবাদত করে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com