রাজনীতি
বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের অপর নাম : শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের অপর নাম : শেখ মুজিবুর রহমান
মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রিন্ট অ-অ+

‘ইতিহাসের মহানায়ক’ হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সবকালে, সবযুগে জন্মায় না। যুগ-যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতেগোনা এক-আধজনই শুধু ‘ইতিহাসের মহানায়ক’ হয়ে উঠতে পারেন। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই মহানায়কের উদ্ভব ঘটায়, আর সেই মহানায়কই হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর ও স্থপতি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী মহাপুরুষ। যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং একটা পরাধীন জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আবার সেই স্বপ্ন সত্যি করে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন



স্কুলজীবন থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর স্বভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক- অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও দেশপ্রেম। ছাত্রজীবনেই দেশের জন্য কাজ করা তাঁর স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে। ওই সময় থেকেই তাঁর কর্মকাণ্ড, বিচক্ষণতা ও ভাষণ শুনে সবাই আকৃষ্ট হতো। ১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জে বিশাল এক জনসভায় বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নজর কাড়েন স্কুল শিক্ষার্থী শেখ মুজিবুর রহমান। তখন থেকেই তাঁর রাজনৈতিক পথচলার শুরু।



১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধু সদ্য মেট্রিক পাশ করে সক্রিয় হন রাজনীতিতে। মাদারীপুরে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু ছাত্রনেতা হিসাবে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল ইসলামিয়া কলেজ। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে সভা ডাকলেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ফজলুল হক মুসলিম অ্যাসেম্বলি হলে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হলো ছাত্র সংগঠন গঠন করার ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু যার নামকরণ করেন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’।


পরে ছাত্রলীগকে অসাম্প্রদায়িক করার লক্ষ্যে সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং ১৯৫৩ সালের কাউন্সিল অধিবেশনে তা কার্যকর হয়।


রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালেই মাতৃভাষার পক্ষে ছাত্রলীগ আপসহীন অবস্থান তৈরি করে। ১১ মার্চ ছাত্রলীগ উর্দুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করে। সেই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে এটিই ছিল কোনো রাজনৈতিক নেতার গ্রেফতারের প্রথম ঘটনা।



বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা হয়। প্রস্তুতি চলে নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙে। পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের পেটোয়া পুলিশবাহিনীর গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অনশন শুরু করেন।


ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর পিতা একদিন বলেছিলেন, ‘বাবা রাজনীতি করো আপত্তি করব না। পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এ তো সুখের কথা। তবে পড়ালেখা করতে ভুলিও না। পড়ালেখা না শিখলে মানুষ হতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, পিতার এ কথা তিনি জীবনে ভুলেননি। বঙ্গবন্ধু ছাত্ররাজনীতি করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন।


প্রায় দুইশ বছর ব্রি‌টিশ শাসন ও তেইশ বছরের পাকিস্তানি শোষণের শিকার বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলায় আধিপত্যে বিস্তার করতে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিরলস সংগ্রাম-আন্দোলন করতে থাকেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ, সর্বোপ‌রি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- এই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তোলেন।


১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির চিত্তে সেই প্রতিশ্রুতিকে শানিত করে, স্বাধীনতার সংকল্পকে তিনি তুঙ্গে নিয়ে যান ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে।


১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যার রাতে জন্ম নেয় একাটি ‘বাংলাদেশ’। এই জন্ম জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অমিত তেজ ও সাহসেই। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে নিদ্রামগ্ন নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদাররা ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চলে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। অতর্কিত আক্রান্ত হয়েও সাড়ে সাত কোটি বাঙালি রুখে দাঁড়ায়। প্রতিরোধের শক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের মুখনিঃসৃত স্বাধীনতার অমর বাণী। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা। বিশ্ব মানচিত্রে গর্বিত, স্পর্ধিত অবস্থান হয় বাংলাদেশের।


স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসকের নিগড়ে বন্দি বাঙালিকে শেকল ভাঙার স্বপ্নে জাগিয়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানই।

বঙ্গবন্ধু এমন বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন- যার হৃদয়তলে আমরা দাঁড়াতে পারি, কিন্তু সমকক্ষ হতে পারি না কেউ। ইতিহাসে অনেক নন্দিত নেতার নাম আছে, কেউ কি আছেন মানব কল্যাণে এমনভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন? খুঁজে দেখুন, একজনও পাবেন না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই অমর অবিসংবাদিত সেই সংগ্রামী নেতা যিনি বলেন, 'একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা- অক্ষয় ভালোবাসা- যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।'


১৯৭১ সালের ৫ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক পত্রিকা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ বলে আখ্যায়িত করে লিখেছিলেন, ‘তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেন, সমাবেশে এবং আবেগময় বাগ্মিতায় তরঙ্গের পর তরঙ্গে তাদের সম্মোহিত করে রাখতে পারেন। তিনি রাজনীতির কবি।’ পুরোবিশ্ব তাঁর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছে। বিশ্বব্যাপী তাঁর মানবতার জয়গান শোনা যায়। কারণ, তিনি বাংলার জন্যই শুধু ভেবেছেন তা নয়। তিনি বলতেন, দুনিয়ার যেখানেই মজলুম মানুষ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, আমরা নিশ্চয়ই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াব।



কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ সালে জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বকে হিমালয় পর্বতমালার সাথে তুলনা করে বলেন, 'আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়াজ। আই হ্যাভ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ।' ২০০৪ সালের বিবিসি বাংলা সারা বিশ্বে জরিপ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করে। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কূটনীতিকেরা তাকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড' আখ্যা দেয়। বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে সপরিবার হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা হয়ে থাকে, এই হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী জুনিয়র সেনা অফিসার জড়িত ছিল। এটা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। ইতিহাসের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তখনকার উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। খন্দকার মোশতাককে সামনে রেখে পর্দার অন্তরাল থেকে জিয়াউর রহমানই ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নেড়েছে, তা এখন সর্বসত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের নায়ক জিয়া নিজেকে যতই আড়াল করার চেষ্টা করুক না কেন ইতিহাসের বিচারে সে ষড়যন্ত্রে তার সংশ্লিষ্টতার নানা কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার আগাগোড়া সবই ছিল জিয়ার নখদর্পণে।


বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের খবর প্রকাশ হওয়ার পর কেঁপে ওঠে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। মুজিবহীন বাংলাদেশের কথা ভাবতেও পারছিল না কেউ, বঙ্গবন্ধুকে দিয়েই তারা বাংলাদেশকে চিনেছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, 'মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই জন্ম নিত না।' দ্য টাইমস অব লন্ডন-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় 'সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।' পশ্চিম জার্মানির পত্রিকায় বলা হয়, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তিনি জনগণের কাছে এত জনপ্রিয় ছিলেন যে, লুইয়ের মতো তিনি এ দাবি করতে পারেন, আমিই রাষ্ট্র।'


বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।'


বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর পেয়ে ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন সেদিন শোক দিবস পালন করেন। এমনকি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কে জি মোস্তফাকে সেদিনই ইরাক থেকে বের করে দেন। সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।'


বিশ্বজুড়ে নন্দিত ফ্রান্সের নেতা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। তাকে নেপোলিয়ন দ্য গ্রেট বলা হয়। সেই নেপোলিয়নের চাইতেও বঙ্গবন্ধুকে সফল বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রানচিস মিতেরা।


১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশের সময় বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে তিনি বলেছেন, 'তোমাদের দেশের অদৃশ্য শক্তিধর এই লোকটির কী অজানা জাদু ছিল! দেখো, আমাদের ফ্রান্সের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট দি গ্রেট। তিনি ফ্রান্স থেকে বহু দূরে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে বন্দি হয়ে পড়েন, তোমাদের শেখ মুজিবের মতো বন্দি হওয়ার পর আমাদের জাতীয় বীর ফরাসি জাতির জন্য বা ফ্রান্সের জন্য আর কোনো অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু তোমাদের ভাগ্য-নির্মাতা (বঙ্গবন্ধু) তোমাদের দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, অন্য দেশের কারাগারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ডেথ সেলে বসেও, শুধু তার নামের অজ্ঞাত জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটা নিক্ষেপ করে, পৃথিবীর ভৌগোলিক রেখা পরিবর্তন করে, একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটান এবং একটি নতুন জাতির জন্ম দেন।'


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিকারী যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে নিজের মুগ্ধতার কথা অকপটে বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের তিন দশক পর, ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি কমপ্লেক্সে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক মুসা সাদিককে কেনেডি বলেন, 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু; খুব পপুলার স্লোগান। আমি যেন কান পাতলে আজও শুনতে পাই।'


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের রণাঙ্গণ পরিদর্শনে এসেছিলেন ম্যাসাচুসেটস-এর এই সিনেটর। সেসময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখার সময় এই স্লোগান শোনেন তিনি।


পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তার ধানমন্ডির বাসায় এসেছিলেন এডওয়ার্ড কেনেডি। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপচারিতার বিষয়ে কেনেডি বলেছেন, 'তার (বঙ্গবন্ধু) ধ্যান-জ্ঞান ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্বশান্তি এবং তিনি ছিলেন যুদ্ধবিরোধী ও বর্ণবাদবিরোধী; যার সঙ্গে আমার আদর্শের মিল ছিল।'


বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিভ্রান্তির অপচেষ্টা হয়েছে, সে ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এডওয়ার্ড কেনেডি। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিককে বলেন, '১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই বিশ্ববাসী তোমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার নামেই বাঙালিকে স্বাধীন জাতির মর্যাদা দিয়েছে। আমি শুধু বলব, পৃথিবীতে দু-শ্রেণির প্রাণী আছে। মনুষ্য প্রাণী ও অমনুষ্য প্রাণী। তোমাদের বাঙালি জাতির ভাগ্য পাল্টাবে কে, যদি তোমাদের মনুষ্য জাতির মধ্যে অমনুষ্য প্রাণীর আধিপত্য প্রবল হয়ে ওঠে। যারা বিশ্বনন্দিত মহামানবসম শেখ মুজিবকে হত্যা করে অহংকার করতে পারে, তারা নরকের কীট।'


জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর তার পাঁচ বছর ছয় মাস তেইশ দিন মেয়াদের শাসনামলে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত যাবতীয় চেতনা ও সাফল্যকে বিসর্জন দিয়ে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশটাকে আবার মিনি পাকিস্তান বানিয়েছিল। জিয়া বাংলাদেশে স্বাধীনতা-বিরোধী জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামের মত দলগুলোকে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করেছে। জয় বাংলা শ্লোগানকে নিষিদ্ধ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তখন নিষিদ্ধ ছিল।


গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করেছিল জিয়া। এছাড়া সকল কুখ্যাত স্বাধীনতা-বিরোধী ঘাতক-দালালকে বিএনপিতে যোগদানের সুযোগ দিয়েছিল। জিয়া সকল চিহ্নিত স্বাধীনতা-বিরোধী সরকারি আমলা-কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, পেশাজীবী ও সামরিক কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বাসিত করেছিল। সে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমি, অগ্নি-সংযোগ, শরণার্থী ক্যাম্প ও গণহত্যার চিত্র মিডিয়ায় প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ইস্যুকে জিয়া কখনোই অগ্রাধিকার দেয়নি। বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারীদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য পাকিস্তানের উপর সে যথাযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেনি। জিয়া দেশের সকল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনকি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং শহীদ মিনারের পুননির্মাণ কাজও জিয়ার আমলে পরিত্যক্ত হয়েছিল। জিয়া দালাল আইন বাতিল করে এগার হাজার স্বাধীনতা-বিরোধী রাজাকারকে মুক্তি দিয়েছিল। তার শাসনামলে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনীর ৪৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।



পঁচাত্তর পরবর্তী জাতির ক্রান্তিলগ্নে, বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে নেমে আসে অন্ধকার। হত্যা, নির্যাতন, দখল, দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতি, ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচার, জঙ্গি উত্থান, গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি জিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যাতে শাস্তি না পায় সেজন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ আইন প্রণয়ন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে আসার সব ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ছয় বছরের দুঃসহ শরণার্থী জীবন মারিয়ে দেশে ফেরেন তাঁরা। বাংলাদেশ তখন অরাজকতা-বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে। খুনি জিয়া ও স্বৈরাচারী এরশাদের কবলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংকটাপন্ন হয়। সেই সংকটকালে মাতৃভূ‌মির হাল ধরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।


জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়, বিএনপি জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রূদ্ধদ্বার হয় উন্মোচিত।

২০০১ সালে আবার বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিবাদ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হামলায় ৩ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। ২০০৩ সালের ৬ জুন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাটোরের মমতাজ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর হাটহাজারী কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউনুস মৌলবাদবিরোধী শিক্ষক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে অধ্যাপক ইউনুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাশখালীতে ১৩ জন হিন্দুকে পুড়িয়ে মারা হয়। শুধু নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে কয়েক হাজার হিন্দু নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুতের জন্য গুলি করে ১৯ জন কৃষককে হত্যা করা হয়।


২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার ৫০০টি স্থানে একযোগে পরিকল্পিত সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। খালেদা জিয়া-তারেকের মদদপুষ্ট হয় জঙ্গিবাদ, সেই জঙ্গিবাদকে বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করেছে শেখ হাসিনা সরকার।


বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনার সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনের বদৌলতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই ব-দ্বীপে রূপান্তর করার লক্ষ্য নিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নেতা হিসেবে অসাধারণত্বের গুণে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাকে ছাড়িয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার উন্নয়নের সফল সার‌থি জননেত্রী শেখ হাসিনা।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সঠিক ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই করোনাকালেও দেশের অর্থনীতি নিরাপদ রয়েছে। বাংলাদেশ এই সক্ষমতা অর্জন করার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের কাছে প্রতিনিয়ত প্রশংসিত হচ্ছেন।



যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জাতির পিতা পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন, দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশরত্ন শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অর্থনৈতিক সর্বসূচকে এগিয়ে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান এই পাঁচটি সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আজ মানুষের দোরগোড়ায়।



শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বাংলাদেশ।


২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এখন দৃশ্যামান। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশই বদলে দিয়েছে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির গতিপথ। ২০৪১ সালকে সামনে রেখে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এই স্মার্ট বাংলাদেশ সহজ করবে মানুষের জীবনযাত্রা, হাতের মুঠোয় থাকবে সবকিছু। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই আসবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ।’


লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com