শিরোনাম
দেবদূতের সাথে প্রথম পরিচয়
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২১, ১৩:০০
দেবদূতের সাথে প্রথম পরিচয়
অনামিকা রায়
প্রিন্ট অ-অ+

বাবা বাড়িতে এসেছেন ছুটি নিয়ে। সয়মটা ঠিক কখন এখন আর তা মনে নেই। আমি পড়তে বসেছি বারান্দায় খেঁজুরের পাটি পেতে। পড়ছিলাম বাংলাদেশের ইতিহাস। যতটা জানার জন্যে পড়ছিলাম তার থেকে বেশি বাবাকে শুনানো ইচ্ছে! ভাবটা এমন - দেখো, আমি কত মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করি। তুমি এতদিন পর বাড়ি এসেছো তাও তোমাকে আকড়ে না থেকে আমি পড়তে বসেছি। সে যাই হোক, আসল কথায় আসি। পড়ছিলাম বাংলাদেশের ইতিহাস। খুব উচ্চ স্বরে- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের মাধ্যমে। ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন এই স্বাধীনতা আনতে। আর আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ব্যাস এ পর্যন্তই। বাবা ভীষণ কড়া গলায় বলে উঠলেন " তুমি ভুলভাল কিসব পড়ছো? ঠিক করে পড়।" আমি আমতা আমতা করে বললাম ঠিকই তো পড়ছি। বইয়ে তো এইসবই লেখা!


বাবার হয়তো আমার কথা ঠিক বিশ্বাস হলো না। তিনি নিজে বইটা হাতে নিয়ে দেখলেন তারপর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বইটা নামিয়ে রেখে দিলেন। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না তবে আমার কৌতুহলি মন বলে উঠলো নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে যা আমি বুঝতে পারছি না। বই বন্ধ করে বাবার কাছে জানতে চাইলাম বিষয়টা কি।


আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আমাকে প্রথম শোনালেন ওই দেবদূতের কথা! যার আজীবন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীন ভূখন্ড।


আমার বেশ মনে আছে আমাদের বাড়িতে আমিই প্রথম মেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি কিনে টাঙিয়েছিলাম। তাঁর জন্মদিন, মৃত্যুদিনে খুব মন কেমন করে উঠতো আমার। আমি বাবাকে অসংখ্যবার জিজ্ঞেস করেছি -তুমি বঙ্গবন্ধুকে দেখছো কখনও, তাঁর কথা শুনেছো? বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে আমার সরল শিশু মন বারবার শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যেতো তাঁর সংগ্রাম, প্রজ্ঞা আর ত্যাগের কাছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রায়ই চলে যেতাম ৩২নং রোডের ওই বাড়িতে। বাড়ির প্রতিটি জায়গা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতাম আমি। (আমার খুব বদ অভ্যাস আছে যাকে বেশি মায়া লাগে তার ছবিতে হাত বুলিয়ে দেওয়ার।) ওই বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর হাত উপরে তোলা একটা ছবি দেখে আমার মন কেমন করে উঠলো হঠাৎ। আমি ছবিটির গায়ে হাত দিয়ে আদর করতে শুরু করেছি ওমনি একটা লোক এসে পুলিশি মেজাজে বলে উঠলো "এখানে কিছুতে হাত দিয়া যাবে না, দূর থেকে দেখেন।" বেশ রাগ হয়েছিলো আমার। মনে মনে ওই লোককে ভৎসনা করেছি ঢের! বঙ্গবন্ধু কি ব্যাটা তোর একার? ওনি সবার, ওনি আমারও!
সেই ছোটবেলাতেই বঙ্গবন্ধুকে আমার নিজের বলে মনে হয়েছে বারংবার। কত আপনার, কত কাছের মনে হয়েছে।


সেবার ওনার বই বেরুলো অসমাপ্ত আত্মজীবনী। চারিদিকে কত হইহই পড়ে গেলো। আমিও একখানা সংগ্রহ করলাম। এমন জীবন্ত দলিল কেউ হাত ছাড়া করে নাকি। যাইহোক আমার জীবন্ত দলিল হাত ছাড়া হয়ে গেলো! জানতে পারলাম না তার কিছুই। তার বেশ কিছুদিন পর আর একখান হাতে পেলাম। যাইহোক এবার বেশ আয়েশ করে পড়া শুরু করলাম ওই জীবন্ত দলিল। আমি যত পড়ি তত মুগ্ধ হয়ে যাই। কখনো কখনো হাহুতাশ করে উঠে মন। এত ত্যাগ, এত কষ্ট একজন মানুষ করতে পারে কীভাবে? সারাজীবন জেলে কাটিয়েছেন মানুষের মুক্তির আশায়। সেকি কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব?


এখনো ৭ই মার্চের ভাষণ শুনলে বুক কেঁপে ওঠে, মনের মধ্যে প্রগাঢ় সাহস জেগে ওঠে। এমন কথা, ওমন ডাক দেবার বুকের পাটা আর ক'জনেই নিয়ে জন্ম নেয়। সেই একজনই বঙ্গবন্ধু।


আমার কাছে গোটা বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। যে মানুষটার জন্ম না হলে কোনদিন এই বাংলাদেশের জন্ম হতো না হয়তো। আজ সেই দেবদূতের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা।


বিবার্তা/এসএ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com