শিরোনাম
যে কারণে কারাগারে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২১, ১৬:৫৫
যে কারণে কারাগারে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিদিনকার সাদামাটা খবরের পেছনের খবর তুলে আনতে তার অদম্য নেশা। সময়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো লেখনির মধ্য দিয়ে সবাইকে জানাতে যার অনুসন্ধানী চোখ সব সময় ব্যাকুল, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য যার আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি রয়েছে তিনি হলেন এই সময়ের সাহসী নারী কলম যোদ্ধা, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম।


পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে সেখানে তাকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। পরে তাকে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার হয়েছে তার বর্তমান ঠিকানা।


সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে যে ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে এ সম্পর্কে প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ডকুমেন্টসগুলো আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেই উপস্থাপন করেছেন। তাই যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মানহানিকর এবং আপত্তিকর বলে জানান তিনি।


মঙ্গলবার (১৮ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। শুনানির পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।


সকালে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তার রিমান্ড নাকচ করেন। এর আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ।


আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আশরাফ উল আলম, প্রশান্ত কুমার কর্মকার। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রশীদ, ব্লাস্টের পক্ষে আইনজীবী মশিউর রহমান এবং আইনজীবী সুমন কুমার রায় শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।


সকাল আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেয়া হয়। রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম সে সময় জানান, তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।


আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, এই মামলার ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ৩৭৯ ধারার উপাদান হচ্ছে, যেকোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্র প্রকাশ্য স্থানে, উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন, তবে কথিতমতে ঘটনাস্থলটি হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুটি ধারা বিজ্ঞ আদালতের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে যে প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলটি কোথায়? আদৌ এই ঘটনা ঘটেছিল কি না?


আইনজীবী আরো বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আজ পরিস্থিতির শিকার।


প্রথম আলোর নিয়োজিত এই আইনজীবী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগ ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড মঞ্জুরের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আদালত এই বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েছেন এবং তা বিবেচনায় নিয়ে রিমান্ডের আবেদন নাকচ করেছেন।


সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের বিষয়ে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, সেকশন ৩-এর কোনো ইনগ্রিডিয়েন্স নেই। অন্য যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা আইন অনুযায়ী জামিনযোগ্য। এ ক্ষেত্রে জামিন পাওয়াটা আমার অধিকার। যথেষ্ট সময় নিয়ে বক্তব্য শোনার জন্য তিনি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


তিনি বলেন, আদালত জামিনের বিষয়টি অনিষ্পন্ন রেখে মৌখিকভাবে বলেছেন, পরে এ নিয়ে শুনানি হবে। আমরা মৌখিকভাবে আদালতকে বলেছি, জামিনের শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার হোক।


রোজিনা তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার কোনো আবেদন করেছেন কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, শুনানি শেষে একটি আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদনের ওপর লিখিত কোনো আদেশ এখনো আসেনি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আদালত আবেদনটি বিবেচনায় নেবেন। নির্যাতনের বিষয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে তার বক্তব্য শুনে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।


সাংবাদিক রোজিনা কারাগারে


রিমান্ড নাকচের পর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রোজিনা ইসলামকে সিএমএম আদালতে নেয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তার রিমান্ড নাকচ করেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার তার জামিনের শুনানি হতে পারে।


এদিকে, শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের রোজিনা ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। একথা বলার সাথেই তাকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ‘কথা বলা যাবে না, কথা বলা যাবে না’ বলে তাকে সরিয়ে নেয়।


যেভাবে সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করা হয়


পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। বেলা তিনটার দিকে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকেরা জানতে পারেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুঠোফোন কেড়ে নেয়া হয়।


এই খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা সেখানে ছুটে যান। যে কক্ষে রোজিনাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। কক্ষের বাইরে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। কয়েকজন সাংবাদিক কক্ষের ভেতরে গেলে রোজিনা ইসলাম বলেন, তাকে মিজান নামের এক পুলিশ সদস্য নাজেহাল করেছেন।


নীরব ভূমিকায় স্বাস্থ্যসেবা সচিব


আসলে কী ঘটেছে, জানতে উপস্থিত সাংবাদিকেরা কয়েক দফা স্বাস্থ্যসেবা সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাও করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারাও পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি। কিন্তু একজন নারীকে এভাবে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার কারণ না বলায় একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা ক্ষোভ জানান। তারা রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন। রোজিনা ইসলামকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার জন্যও তারা বলতে থাকেন।


রাত সাড়ে আটটায় তাকে ধরাধরি করে নারী পুলিশ সদস্যরা ওই কক্ষ থেকে বের করে নিচে নামিয়ে আনেন এবং গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।


নেয়ার কথা ঢাকা মেডিকেলে, নিলেন শাহবাগ থানায়


এ সময় সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চান, রোজিনাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তখন পুলিশ জানায়, চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, তাকে হাসপাতালে নয়, শাহবাগ থানায় নেয়া হয়েছে।


এরপর সাংবাদিকেরা আবারও স্বাস্থ্যসেবা সচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখনো তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সচিবের কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলেন। কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।


তবে রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানায় রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এসে তার বোন সাবিনা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার বোন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, আটকের পর তার বোনের ব্যাগ কেড়ে নেয়া হয়। তখন ব্যাগে কিছু ‘ডকুমেন্ট’ ঢুকিয়েও দিয়ে থাকতে পারে। রোজিনা ইসলামের শারীরিক অবস্থা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তার বোন।


শাহবাগ থানার গড়িমসি


শাহবাগ থানায় আনার পর রাতভর রোজিনা ইসলামের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে গড়িমসি করে শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তবে সে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।


রাত ১১টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানানো হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতে রোজিনা ইসলামকে থানাতেই রাখা হবে।


সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সোমবার করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন। দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শাহবাগ থানায় তাকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে রাখা হয়। স্বজনদের মাধ্যমে আনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ রাতে তাকে দেয়া হয়।


থানার সামনে যত বিক্ষোভ


রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেয়ার প্রতিবাদে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন এবং রোজিনাকে মুক্তির দাবি জানান। সাংবাদিকেরা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


রাত পৌনে ১২টায় শাহবাগ থানা থেকে বেরিয়ে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।


দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।


প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেছেন, রোজিনা সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু আলোচিত প্রতিবেদন করেছেন। তিনি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও প্রতিবেদন করেছেন। ধারণা করছি, এসব প্রতিবেদনের কারণে, রোজিনা ইসলাম কারো কারো আক্রোশের শিকার হয়েছেন।’তিনি বলেন, বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।


সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের একটি পবিত্র স্থানে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এর তীব্র নিন্দা জানাই।


আনিসুল হক বলেন, সরকার চাইলেই রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। তারপরেও আমরা আইনগতভাবে লড়াই করছি। আমরা জানি, আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব এবং আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড দাবি করা হয়েছিল। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানির জন্য আদালত ২০ মে দিন ধার্য করেছেন।


জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য। আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নেয়ার বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে।


অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রোজিনা ইসলাম কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।


নিন্দা, প্রতিবাদ


এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া গতকাল দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।


রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে বলেছে এডিটরস গিল্ড। গত রাতে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সরকারের নীতি যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সেখানে আমলাতন্ত্রের ভেতরে বা প্রশাসনের অভ্যন্তরে কারা এসব কাজ করে গণমাধ্যমকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।


বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের স্টাফদের আচরণ এই মন্ত্রণালয়ের সকল লুটপাট ও কলঙ্কের মধ্যে নিকৃষ্টতম একটি ঘটনা।’


বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেক অংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় সাংবাদিকেরা উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি ধারাবাহিক আক্রোশেরই প্রতিফলন এটা।


ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান বলেন, কোনো নিরপরাধ সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।


রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী। তিনি অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে পুলিশি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।


বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) গতকাল এক টুইট বার্তায় রোজিনা ইসলামকে আটক এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সচিবালয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। সিপিজে তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সিপিজে তাদের টুইটে সচিবালয়ে আটক অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যাওয়া রোজিনা ইসলামের একটি ছবিও ব্যবহার করেছে।


পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকের ঘটনা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা এক টুইটে রোজিনা ইসলামকে শর্তহীনভাবে এবং দ্রুত ছেড়ে দিতে কর্তৃপক্ষকে বলেছে।


বিবার্তা/গমেজ/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com