
২০০৪ সালের আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে তারেক রহমান-বাবরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস,অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল, আজমল হোসেন খোকন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।
এর আগে এ মামলার হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাস করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য আজকের (৪ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আপিলের ওপর পাঁচ দিনের মতো শুনানি শেষে গত ২১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ের এই দিন ঠিক করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের সাজার রায় বহাল রাখার আরজি জানিয়েছে। অন্যদিকে শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার প্রার্থনা জানিয়েছেন।
এর আগে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট, ২০ আগস্ট শুনানি হয়। পঞ্চম দিন ২১ আগস্ট শুনানি শেষ করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক নেতা-কর্মী। বিচারপ্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে আপিল শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার পর্যায়ে এল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এ ঘটনায় তখন মামলা হয়েছিল মতিঝিল থানায়। মামলার তদন্ত নিয়ে তখন নানা বিতর্ক উঠেছিল। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে সিআইডি। সংস্থাটি ২২ জনকে আসামি করে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এরপর হাইকোর্টে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। এতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়। ফলে মামলা থেকে সবাই খালাস পান।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে এটা এক জঘন্য মর্মান্তিক ঘটনা, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা আইভি রহমানসহ বহু মানুষ প্রাণ হারান। যারা মারা গেছেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে তদন্ত হওয়া দরকার, যা এ মামলার ক্ষেত্রে এখনো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত বলে রায়ে এসেছে। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]