
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা স্থগিতই থাকছে।
২১ সেপ্টেম্বর, রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউনে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ। এর আগে বিকেল ৩টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের বাসায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়।
অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, গতকাল পোষ্যকোটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের ধ্বস্তাধস্তির ঘটনায় একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্য কোটা) ভর্তি আপাতত স্থগিত থাকবে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বডির সাথে আলোচনা শেষে অচিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া, সিন্ডিকেট থেকে যথাসময়ে রাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল পোষ্য কোটা নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় না নিয়ে আসা পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (রাকসু) সকল কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা.
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি একাডেমিক সভায় পোষ্যকোটা পুনর্বহালের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাবেক সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। এদিন রাত ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন চালান তারা। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী।
রাতভর আমরণ অনশনের পর বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় তারা উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকায় এবং সেখানে টাকা ছুড়ে মারে। এরপর তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাইন উদ্দিন খানের এর বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে তিনি বাসভবনে প্রবেশ করতে না পারায় প্রক্টর মাহবুবর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারও শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হয়। এ সময় কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক, উপ-উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। এই ধ্বস্তাধস্তিতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়। এরপর কয়েকঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসউদ, প্রক্টর মাহবুবুর রহমান, রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হকসহ আরও অনেকে।
রাতভর এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাত পৌনে দুইটায় পোষ্য কোটার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এবং রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশ্বাস দেন তিনি। এরপরই থেকে কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্যকোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]