
একদিকে ব্রেক্সিট-করোনা মহামারী। ভঙ্গুর অর্থনীতির ধাক্কা সামাল দিতে হঠাৎ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটে ব্রিটেনে অভিবাসী হয়ে আসার পথ খুলে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
অন্যদিকে, ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের ধরতে নতুন করে সমন্বিত অভিযান শুরু করেছে সরকার। আবার ব্রিটেনে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বাইরে কাজ করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনাও ঘটেছে প্রায়শই।
জানা গেছে, হোম অফিসের সাম্প্রতিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশিও আছেন।
এমতাবস্থায় বর্তমানে ব্রিটেনে নতুন আসা শিক্ষার্থী ও স্টুডেন্ট ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিটে মাইগ্রেট করা বাংলাদেশিদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকে এদেশে আসার পর ১৫ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ২০ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় নিজেদের ভিসার রুট পরিবর্তন করেছেন।
কামরুল হাসান নামের একজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান- গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে অর্ধেক টিউশন ফি দিয়ে এখানে এসেছেন। ক'মাস না যেতেই ভর্সিটি আবারো টাকা চাইছে। তাই তিনি এখন বাধ্য হয়েই আরো ১৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে ওয়ার্ক পারমিটে সুইচ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান- ওয়ার্ক পারমিটদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক পারমিটের কাগজপত্র দিলেও কাজ দিতে পারছে না। জিরো আওয়ার চুক্তির কারণে কাজ না থাকায় ঘর ভাড়া, খাবারের মতোন দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
ব্রিটেনের অভিবাসন আইনজীবী ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী বলেন, সরকারের ইমিগ্রেশন পলিসি সমন্বিত না। একেক সময় একেক সরকার ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীরা যাতে ব্রিটেনে বসবাস ও কাজের সুযোগ না পান, সেজন্য তাদের ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ, এমনকি বাড়ি ভাড়া ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না দিতেও বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারে ইমিগ্রেশন রেইডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১৫২টি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের কাজে রাখার দায়ে এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।
তারেক চৌধুরী আরো বলেন, কেবলমাত্র আশ্রয়প্রার্থীদের (অ্যাসাইলাম সিকার) কাজের অনুমতি দিলে বছরে সরকারের একশ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ হতো। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধভাবে কাজের সুযোগ দেওয়া হলে তারা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতেন।
এ সময় ফুড ডেলিভারিসহ বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে যেসব অবৈধ অভিবাসী কাজ করছেন, সেসব কর্মক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীদের কাজের সুযোগ বন্ধে নতুন প্রস্তাবনা আনছে সরকার এমনটাও উল্লেখ করেন ব্রিটেনের অভিবাসন আইনজীবী ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী।
বাংলা ট্রিবিউনে কর্মরত সাংবাদিক ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনজের আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের অনেক বন্ধু-স্বজন স্টুডেন্ট ভিসায় এদেশে এসে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকে ওয়ার্ক পারমিট বা কেয়ারার ভিসার জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড খরচ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেলেও কাজ পাচ্ছেন না। এদেশে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকই বেকার। ব্রিটিশ অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে। তাই যারা ব্রিটেনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসবেন তাদের প্রকৃত অবস্থা জেনে-বুঝে আসা উচিত।
বিবার্তা/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]