শিরোনাম
ময়মনসিংহে হাত-পা ও মাথাহীন লাশের রহস্য উদঘাটন
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০৩
ময়মনসিংহে হাত-পা ও মাথাহীন লাশের রহস্য উদঘাটন
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া হাত-পা ও মাথাহীন মরদেহের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।


বুধবার (৩০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন।


পুলিশ সুপার জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হুগলা এলাকায় থাকতেন নিহত ও হত্যাকারী দুই পক্ষই। তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু মূলত সাবিনাকে নিয়ে। তাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করতেন বকুল। বকুলের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সাবিনাকে বিয়ে দেয় তার পরিবার। কিন্তু বিয়ের পরও বকুলের হাত থেকে রেহাই পাননি সাবিনা। তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও তাকে উত্ত্যক্ত করেন বখাটে বকুল। আর এ উত্ত্যক্ত থেকে রক্ষা পেতে তাকে হত্যার ছক আঁকেন সাবিনাসহ দুই ভাই ও ভাবি।


পরিকল্পনা মতো সাবিনা প্রেমের ভান করেন বকুলের সঙ্গে। এরপর তাকে নিয়ে গাজীপুরে যান৷ পরে তার দুই ভাই গার্মেন্টসকর্মী ফারুক, হৃদয় ও ফারুকের স্ত্রী মিলে গার্মেন্টসে ব্যবহৃত ছুরি দিয়ে হত্যা করেন বকুলকে। এরপর শরীর কেটে কয়েকটি টুকরা করা হয়। এসব টুকরার মধ্যে ছয় টুকরা একটি লাগেজে করে ময়মনসিংহের পাটগুদাম এলাকার ব্রিজের পাশে ফেলে রেখে যান ফারুক ও হৃদয়।


এদিকে হাত, পা ও মাথা ভ্যানিটি ব্যাগে করে সাবিনাকে সঙ্গে নিয়ে মৌসুমি আক্তার কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাটে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন। রাজারহাটে মৌসুমী আক্তারের বাবার বাড়ি।


এ ঘটনায় ২৫ অক্টোবর ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের পর তার তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখার উপর ন্যস্ত করেন জেলা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহ আবিদ হোসেন।


মামলাটি তদন্তকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ময়মনসিংহ ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে একটি দল। মামলার তিনদিনের মাথায়ই গত ২৮ অক্টোবর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও মরদেহের পরিচয়৷ বোনকে উত্ত্যক্ত করার কারণেই ঘটে ওই হত্যাকাণ্ড।


হত্যার শিকার ওই যুবকের নাম মো. বকুল (২৮)। তিনি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হুগলা এলাকার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে।


এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ফারুক মিয়া (২৫), তার ভাই হৃদয় মিয়া (২০), বোন সাবিনা আক্তার (১৮), ফারুকের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার (২২)।


যেভাবে উদঘাটন হয় হত্যার রহস্য:


ময়মনসিংহ থেকে শরীর ও কুড়িগ্রাম, রাজারহাটে পাওয়া হাত পা ও মাথার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে কিনা প্রথমে তা খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ। দুই দিনে উদ্ধার হওয়া সবগুলো মরদেহের খণ্ড একই পলিথিন ও কালো সুতা দিয়ে প্যাঁচানো থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয় অংশগুলো একই ব্যক্তির।


এদিকে ময়মনসিংহে লাগেজে রাখা মরদেহের সঙ্গে উদ্ধার হয় এক নারীর পোশাক। আবার কুড়িগ্রামে খণ্ডিত অংশের সঙ্গে পাওয়া যায় একটি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও নারীদের ব্যবহৃত ভ্যানিটি ব্যাগ। তখন পুলিশ ধারণা করে কোনো নারী সংশ্লিষ্ট ঘটনায় প্রতিশোধমূলক এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। সেই ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতরে একটি চিরকুটও পায় পুলিশ। চিরকুটের সূত্র ধরেই পুলিশ নেত্রকোনার পূর্বধলায় খুঁজে পায় সাবিনা আক্তারের পরিবারকে। এরপর তদন্তে বের হতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।


গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় আসামিদের। তাদের দেয়া তথ্যে নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র।


পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন পরিচয় গোপন করতে ও পুলিশ থেকে বাঁচতেই মরদেহটি টুকরা টুকরা করে পৃথক স্থানে ফেলেছিলেন তারা।


বিবার্তা/বাপ্পী/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com