
গোপালগঞ্জে ফের ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান শনিবার (১৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারায় এটি জারি থাকবে।
এ ধারা অনুযায়ী ওই সময় জেলার যেকোনও স্থানে যেকোনও ধরনের সভা, মিছিল বা জনসমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি বলেন, ‘রবিবার সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, জরুরি সেবা ও সরকারি অফিস ১৪৪ ধারার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এ সময় সভা-সমাবেশ ও একাধিক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও জেলার সর্বত্র বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা, জনমনে আতঙ্ক। কারফিউয়ের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জারি হলো ১৪৪ ধারা।
বুধবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান গোটা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরবর্তীতে সেটি কারফিউতে রূপ নেয়। সেদিন থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হয় কারফিউয়ের সময়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারফিউয়ের সময়ে পরিবর্তন আনেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।’ ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকে। এরপর শনিবার (১৯ জুলাই) বিকাল ৫টায় তিনি জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজ রাত ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে কারফিউয়ের সময়। এই সময়ে শুধু জাতীয় জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা এবং যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।
এদিকে টানা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ সাধারণ নাগরিকরা। তারা যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতির উত্তরণ চান।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও ছাত্রলীগ (নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন। এরপরও গোপালগঞ্জের পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে সমাবেশ করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা তাদের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করার কারণে এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে বলে মনে করেন গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ। সেদিনের সংঘর্ষে নিহত হন ৫ জন।
এদিকে, বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী থানায় পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় প্রায় তিন হাজারের অধিক লোককে আসামি করা হয়েছে বলে জানা যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবার্তা/শান্ত/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]