
রাজধানীর লালবাগের এক বাসায় দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এক দিন আগে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে ওঠা এক নারীকেও খুঁজছে পুলিশ।
লালবাগ টাওয়ার পার হয়ে পাঁচ ফুটের একটি গলির ভেতর কয়েকটি বাড়ি পেরিয়ে একটি দোতলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে আবু জাফর ও ফারজানা আক্তারের সংসার।
১৬ নভেম্বর, শুক্রবার পুলিশ আসার পর প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, ওই বাসা থেকে লুটের পর তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। জাইফা নামে শিশুটির বয়স মোটে আট মাস, সে এখনো মায়ের দুধ খায়।
স্বজন ও প্রতিবেশীরাও বলছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে ওই বাড়িতে ওঠা সেই নারী সকালবেলা আরও তিনজন পুরুষ সহযোগীসহ শিশুটিকে নিয়ে চলে যান।
লালবাগ থানার ওসি ক্যশৈনু বলছেন, সিসিটিভি ভিডিওতে তিনজন পুরুষকে ওই বাসায় ঢুকতে দেখা যায়। পরে তাদের সঙ্গে ওই নারীকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা এলে খুলে দেওয়া হচ্ছে।
গৃহকর্তা আবু জাফর হাওলাদারের ভাই সোহাগ হাওলাদারকে পাওয়া গেল বাড়ির সামনে। তিনি জানালেন, তার ভাই জাফর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আর তার স্ত্রী ফারজানা চাকরি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা অনুবিভাগের স্টেনো হিসেবে।
সোহাগ হাওলাদার বলেন, ১৬-১৭ বছর আগে ফারজানের সঙ্গে আবু জাফরের বিয়ে হয়। তাদের বাচ্চা ছিল না। এ বছর তাদের বাচ্চা হয়। অনেক সাধনার সন্তান তাদের।
ঘটনা শুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফারজানার সহকর্মী ও স্বজনেরা শুক্রবার বাসায় ভিড় করেন।
তাদের পারিবারিক বন্ধু ও ফারজানার সহকর্মীর স্বামী মো. রানা জানান, সকালে ঘটনা শুনে তারা বাসায় এসে দেখেন, আলমারি খোলা, ফারজানার নাকে, কানে সাধারণ যে গয়নাগুলো থাকে সেগুলোও নেই।
ফারজানা তাকে বলেছেন, আলমারিতে থাকা দেড় লাখ টাকাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় বলে গেছে, "তোর বাচ্চাকে ইনডিয়ায় পাঠায় দেব।”
গত এক মাস বাচ্চা দেখাশোনার জন্য ফারজানার বাবা-মা এ বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তারা বরিশালে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তার আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফারজানা ওই ‘পেয়িং গেস্ট’কে বাসায় রাখেন।
সকালবেলা ফারজানার বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনজন লোক বাসায় আসে। পেয়িং গেস্ট সেই নারী তাদের দড়জা খুলে দেন।
সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে তারা বাসায় ঢোকে। এর মধ্যে ফারজানাকে বেঁধে লুটপাট শেষে শিশুটিকে নিয়ে ৯টা ২৪ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।
মো. রানা জানান, ফারজানা তাদের বলেছেন, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বাসা ওঠা ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল স্টাফ বাসে। ওই নারী ফারজানাকে বলেছেন, তিনি সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করেন, পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ফারজানা তাকে বাসায় থাকার কথা বলেন।
ফারজানা তাদের (রানা ও তার স্ত্রীকে) বলেছেন, সকালে তার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসেন। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজলে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনজন পুরুষ বাসায় ঢুকে পড়ে।
“ঢুকেই তারা ফারজানার উপর আক্রমণ চালায়। ফারজানাকে বেঁধে টাকা পয়সা লুট করে তার শিশুটিকে নিয়ে তারা চলে যায়।”
এদিকে ফারজানার প্রতিবেশীরা বলছেন, ফারজানা ও জাফর ওই বাসায় ওঠেন দুই বছর আগে। তবে প্রায় দুই মাস ধরে জাফর বাসায় আসতেন না নিয়মিত। ফারজানার বাবা-মাই এখানে থেকে বাচ্চার দেখাশোনা করতেন।
এ ঘটনার পর পুলিশ ফারজানার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেশীদের ভাষ্য। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ফারজানার স্বামীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
লালবাগ থানার ওসি ক্যশৈনু বলেন, "পরিচিত হিসেবে কোনো ডকুমেন্টস না রেখেই মেয়েটিকে বাসায় ওঠানো হয়। সেই মেয়েটি আমাদের প্রধান সাসপেক্ট। কিন্তু তার নাম-ঠিকানা বা কোথায় কাজ করত কিছুই বলতে পারছেন না গৃহকর্ত্রী।
“সিসিটিভি ভিডিও আমরা পর্যালোচনা করছি। আমরা তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছি।”
ওই বাড়ির মালিকের নাম শরিফুল ইসলাম। ওই এলাকায় তার পাশাপাশি দুটো বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলো দেখাশোনা ও ভাড়া আদায় করেন মোহাম্মদ ইসরাফিল সরকার নামের একজন।
ইসরাফিল বলেন, “প্রায় দুই বছর ধরে সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা (ফারজানা ও জাফর) এখানে রয়েছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্য চলছিল। স্বামী কয়েক মাস ধরে বাসায় আসে না। তবে ঘটনার পর আজ সকালে বাচ্চার বাবা বাসায় এসেছিল। দুপুর পর্যন্ত এখানেই ছিল।”
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]