দৌলতপুরে পদ্মার ধারে মাছের হাট, বছরে আয় শতকোটি টাকা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৫৮
দৌলতপুরে পদ্মার ধারে মাছের হাট, বছরে আয় শতকোটি টাকা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। উপজেলার ফিলিপনগর, মরিচা ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ৩টি একেবারে পদ্মা নদীঘেঁষা। এছাড়াও চিলমারী ইউনিয়নের চারপাশ দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে পদ্মা নদী। এসব ইউনিয়নের প্রায় একহাজার জেলের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হলো মাছ শিকার।


এছাড়াও বাড়তি আয়ের আশায় নদীপাড়ের লোকজন কমবেশি মাছ ধরে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম ও পদ্মায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে নদীপাড়ের মৌসুমি মাছ শিকারিরা মাছ শিকারে মেতে উঠেন।


প্রতিদিন তাদের জালে ধরাপড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রয়ের জন্য মাছের ঝুড়ি বা মাছভর্তি গামলা নিয়ে বসে যান পদ্মাপাড়ের আবেদের ঘাট, ইসলামপুর ঘাট, বৈরাগীরচর, ভাগজোত, ভুরকাবাঁধ ও বাংলাবাজারসহ নদীতীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অথবা পার্শ্ববর্তী এলাকার হাট-বাজারগুলোতে। নদীর এসব টাটকা মাছের বেচাকেনা চলে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।


নদীর মাছের চাহিদা বেশী থাকায় এসব মাছ কিনতে ছুটে যান স্থানীয়রা সহ বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলার মানুষ এবং পাইকার মাছ ব্যবসায়ীরা। ঝুড়ি ভর্তি করে ঢাকাতেও পাঠানো হয় এ অঞ্চলের মাছ। এসব অস্থায়ী মাছের বাজারগুলো থেকে প্রতিদিন মাছ বিক্রয় হয়ে থাকে কয়েক লক্ষ টাকা। যা বছর শেষে শতকোটি ছাড়িয়ে যায়।


এসব মাছের বাজারে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে চিংড়ি, পিউলি, চ্যালা, ঘাউরা, বাঁশপাতা, বাইম, বেলে, ট্যাংরাসহ নানা প্রজাতির মাছের। মৌসুমে ইলিশও পাওয়ায় যায়। এগুলো আকারভেদে ১৫০টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হয়ে থাকে।


এসব মাছের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা বেষ্টিত অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও দৌলতপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোনো মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। যার কারণে অনেক সময় জেলেরা তাদের মাছের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। একইভাবে দ্রুত মাছ বিক্রয় করতেও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। তাই এলাকার জেলেরা দাবি, এখানে সরকারি উদ্যোগে একটি মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার। এটা হলে শুধু জেলে পরিবারের সমৃদ্ধি হবে না, স্থানীয় মৎস্য খাতে ঘটবে অর্থনীতির স্ফীতি।


স্থানীয় জেলে আবু সিদ্দিক ও জামাল হোসেন জানান, প্রতিদিন পদ্মা নদী থেকে তারা যে পরিমাণ মাছ শিকার করেন তা বিক্রয়ের জন্য নদী তীরবর্তী ঘাট ও স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে হয়। কিছু পরিমাণ পাঠানো হয় কুষ্টিয়া শহরের মাছের আড়তেও। এতে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।


নাজমুল ইসলাম ও মিন্টু নামে আরেক জেলে দলের সদস্যরা বলেন, আকার ও মাছের ধরনের ওপর নির্ভর করে মাছের দাম নির্ধারণ করা হয়। আবার অনেক সময় ক্রেতার চাহিদা অনুপাতে আমদানি বেশি হলে দাম কমে যায় এসব মাছের।


ফিলিপনগরের আবেদের ঘাটে মাছ কিনতে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মহিউদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সকালে নদীর ঘাটে এসেছি নদীর টাটকা মাছ কিনতে। যদিও এখানে মাছের দাম বেশি। তারপরও নদীর ফ্রেশ মাছের রয়েছে বাড়তি চাহিদা ও আলাদা স্বাদ।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ স্বপন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, প্রতি মৌসুমের মে মাসের শেষ সময় থেকে ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত নদীতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন কী পরিমাণ মাছ শিকার বা বিক্রয় হয়, এর সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও গড়ে অন্তত দেড় হাজার কেজি মাছ বিক্রয় হয়ে থাকে। যার থেকে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকারও বেশি আয় হওয়ার কথা।


মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্রের বিষয়ে তিনি আরো জানান, আমরা একাধিকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছি, তবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখানে একটি মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে এই খাতের আরও উন্নয়ন সম্ভব। ফলে অর্থনীতির গতি আরো সমৃদ্ধ হবে।


স্থানীয় চাহিদা ও মৎস্যখাতের উন্নয়ন ঘটাতে হলে এখানে প্রয়োজন একটি মৎস্য বিপণন কেন্দ্র, এমনটি মনে করেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সংশ্লিষ্টরা।


বিবার্তা/শরীফুল/এনএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com