ঈদ বাজার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫, ২১:১৭
ঈদ বাজার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করছেন। কোরবানির ঈদের বাজারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে শসার উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে, পাশাপাশি খরচ কমানো সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা আশা করছেন, ঈদ মৌসুমে শসার বিক্রি থেকে তারা ভালো লাভ অর্জন করবেন।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও কৃষি প্রদর্শনীর মাধ্যমে মালচিং পদ্ধতিতে কৃষকদের শসা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলার ৮৬ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত শসা উৎপাদিত হয়। পাইকারি বাজারে কৃষকেরা প্রতি বিঘা শসা ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছেন।


সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের ধানসার গ্রামের মোহনপুর এলাকার কৃষক উজ্জ্বল মিয়া জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করেছেন। তাঁর মতে, এই পদ্ধতিতে ফলন বেশি হয় এবং সব দিক থেকেই এটি লাভজনক। প্রথমবার মালচিং ব্যবহারে খরচ একটু বেশি হয়, তবে দ্বিতীয়বার থেকে খরচ অর্ধেক কমে আসে। ফলে খরচ কম হয় এবং লাভও বেশি হয়।


একই গ্রামের কৃষক রতন মিয়া জানান, তিনি গত তিন বছর ধরে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করছেন। প্রথমবার লাভ কম হলেও, দ্বিতীয়বার থেকেই ভালো লাভ পেয়েছেন। এবছর তিনি আড়াই বিঘা জমিতে শসা আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, তবে দ্বিতীয়বার থেকে খরচ অনেক কমে আসে। তিনি জানান, বিঘা প্রতি খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়।


সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, তালশহর পূর্ব ইউনিয়নে ১৬ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ হচ্ছে। শসা অল্প সময়ের একটি লাভজনক ফসল। এক বছরে একই জমিতে তিনবার পর্যন্ত শসা চাষ করা যায়।


তিনি আরও জানান, ময়নামতি, এলিনা, ডেইজি, চায়না-১ এই জাতগুলোর শসা বেশি চাষ হয়। এছাড়া শীত মৌসুমে সাবেরা, মালিনী, কাঞ্চন, কুলফি জাতের শসাও চাষ করা হয়, কারণ এসব জাত শীত সহনশীল। অল্প সময় ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন শসার উৎপাদন বাড়ছে।


তিনি আরও বলেন, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহারের ফলে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যায় এবং খরচও বাঁচে।


সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, সদর উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হচ্ছে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কৃষকেরা শসা চাষে ব্যস্ত। আলভি গ্রীন, কুলফি, মালিনীসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের শসা এখানে চাষ হয়। এসব শসা সুস্বাদু, ছোট আকৃতির এবং দেখতে দেশি শসার মতো হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি।


তিনি আরও বলেন, শসা একটি স্বল্প সময়ের কুমড়াজাতীয় ফসল, তাই বছরে এক জমিতে তিনবার পর্যন্ত চাষ সম্ভব। তবে কৃষকেরা ফসল আবর্তনের (ক্রপ রোটেশন) কারণে বছরে দুইবার শসা আবাদ করছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছে। তবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখনও পর্যাপ্ত নয়, ফলে সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। অনেকেই সবজি প্রণোদনা পেয়েছেন।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মইনুল হক সরকার বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে আগাছানাশ এবং নিড়ানি বাবদ খরচ অনেক কমে যায়। মাটিতে পানি সংরক্ষণ হয় বলে সেচের খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কমে আসে। রোগবালাই কম থাকে, এবং সূর্যের আলো মাল্চে প্রতিফলিত হয়ে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সাধারণ চাষের তুলনায় ১দশমিক৫ থেকে ১দশমিক৭ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়।


তিনি আরও জানান, মালচিং পদ্ধতিতে ক্ষেতের আর্দ্রতা ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে, কারণ এই প্রযুক্তির ফলে জমির পানি সূর্যের তাপ বা বাতাসে দ্রুত উবে যায় না। এতে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ প্রয়োজন হয় অনেক কম। মালচিং ব্যবহারে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আর্দ্রতা সংরক্ষণ সম্ভব।


চলতি মৌসুমে জেলায় মালচিং পদ্ধতিতে ৮৬ হেক্টর এবং সাধারণ পদ্ধতিতে ৭১ হেক্টর জমিতে শসা আবাদ করা হয়েছে।


বিবার্তা/আকঞ্জি/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com