
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল করিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ওই শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষক ও ছাত্ররা ফুঁসে উঠেছে। দফায়-দফায় প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে ওই বিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কালিহাতী শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের কোটি-কোটি আত্মসাৎ করে তিনি এলেঙ্গা শামসুল হক কলেজের সাথে ৬ তলা বাড়ি, টাঙ্গাইল শহরের টাঙ্গাইল টাওয়ারের নবম তলায় ফ্ল্যাট, এলেঙ্গা শহরের মশাজান এলাকায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে জায়গা ক্রয় ও স্ত্রীর নামে কোটি টাকার এফডিআর করাসহ নামে-বেনামে গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়।
তিনি গত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকাতে শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে মোট অংকের টাকা গ্রহণ, একক সিদ্ধান্তে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ, প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিকট ৭-৮’শ করে টাকা নিয়ে হিসাব না দেওয়, নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ-লাখ টাকা উপার্জন, উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিকট টাকা নেওয়ার বিধান না থাকলেও জোর পূর্বক বেতন আদায়, অপ্রয়োজনীয় খাতে লাখ-লাখ টাকা ব্যয় দেখানো, বিদ্যালয়ে পুরাতন ভবন বিক্রি করে সেই অর্থ আত্মসাৎ, সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় টাকা নেওয়া ও পরীক্ষার ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ নানা খাত থেকে গত ১০-১২ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দলীয় প্রভাব থাকায় বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এলেঙ্গা শামসুল হক কলেজের পূর্ব পার্শ্বে ৮ শতাংশ জায়গা কিনে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। তিনি ওই বাসায় না থাকলেও ভাড়াটিয়া রয়েছে। কথা হয় এক ভাড়াটিয়ার সাথে। তিনি জানান, এই বাসাটি এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল করিমের। তারা দুই বছর যাবৎ এই বাসায় ভাড়া থাকেন। টাঙ্গাইল শহরের টাঙ্গাইল টাওয়ারের ৯তলায় ফ্ল্যাটটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মশাজানের জায়গাটিতে কোনো ভবন নেই। এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাশে ৫ শতাংশ ভূমিটি টিনশেড ঘরসহ কিনেছেন। সেই বাসায় তার বোন জামাই থাকে।
এদিকে, এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুল বাশার তারেক ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবুল খায়ের মো. ফেরদৌস ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে শিক্ষকদের আয়োজনে বিদ্যালয়ের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনের করেছেন। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল করিম দুর্নীতির দায়ে সরকার পতনেরর পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এলেঙ্গা ও টাঙ্গাইল শহরের তিনি আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন। এছাড়াও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিজের বোন জামাইকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের চাকুরি দিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা আরো বলেন, বিদ্যালয়ের অর্থ খরচ করে কোন প্রকার হিসাবনিকাশ না দিয়ে সকল টাকা নিজের নামে ব্যাংকে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে কোন প্রকার কমিটি তৈরি ও দরপত্র না দিয়ে নিজের খুশি মতো কাজ করিয়েছেন। নবম-শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১২০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও রসিদ ছাড়াই ৫’শ ও প্রাকটিক্যাল ফি বাবদ ৭-৮’শ টাকা করে আদায় করতেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ নিজের পছন্দের মানুষকে বানাতেন। এছাড়াও উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন আদায় করতেন। দলীয় প্রভাবের কারণে তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গত ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাতক রয়েছে।
তারা বলেন, বিদ্যালয় থেকে পলায়ন করার সময় বিদ্যালয়ে চেকবই নিয়ে গেছেন। চেক বই না থাকায় বিদ্যালয়ের কাজসমূহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় প্রধান শিক্ষকের অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ সকল অনিয়মের বিচার দাবি করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক কামরুন্নাহান, আমেনা সুলতানা মুক্তা, আব্দুল বারেক, মেহেদী হাসান, আব্দুল কাদের ও সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমুল করিম মুঠোফোনে জানান, এতসব সম্পত্তি তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বিবার্তা/ইমরুল/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]