
আর মাত্র একদিন পর মুসলিম ধর্মাবলম্বীর বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তাই দিনাজপুরের হিলির কামার পাড়ায় বেড়েছে কর্ম ব্যস্ততা। শুরু হয়েছে টুং টাং শব্দ। নতুন নতুন দা, ছুরি, বটির পাশাপাশি কোরবানির পশু কাটাকাটিতে ব্যবহৃত পুরাতন ছুরি-বটি মেরামতের কাজও চলছে দিনরাত। সব মিলে দম ফেলার ফুরসত নেই এই কাজে জড়িতদের। তবে হিলির কামার পাড়ায় খুশির চেয়ে উৎকণ্ঠা যেন জায়গা দখল করেছে। কয়লা সংকট আর লোহা-ইস্পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে এখানকার কামারদের।
শুক্রবার (১৪ জুন) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হিলির কামার বাড়ি ঘুরে ক্রেতা কোরবানি পশু ও ছাগল জবাই হওয়ার পরে ব্যবহৃত দা, চুরি, বটি ও ছোট বড় চাকু তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
হিলি বাজারে আসা ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর দা, বটি, চাকুর দাম অনেক বেশি। কোরবানির পশু কিনেছি। তাই দাম বেশি হলেও সরঞ্জাম কিনতে হবে। হয়ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দাম আবার কমে আসবে।
আর এক ক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদের কোরবানি কিনেছি। এখন দা, চাকু ও ছুরির দরকার তাই বাজারে এসেছি। কিন্তু লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সবকিছুর দাম বেশি চাচ্ছেন। তাই নতুন কেনার বদলে গত বছরের বানানো দা, ছুরি আর চাকু ধার করতে নিয়ে যাচ্ছি।
হিলি চারমাথা মোড়ে বসে কামার দিপু রায় তিনি বলেন, কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে দা-বঁটি বানানোর লোহা আর ইস্পাতের দাম। ফলে এখন কাজ করে আগের মতো লাভ হচ্ছে না। আগে হোটেল, বাসা-বাড়ি থেকে কয়লা সংগ্রহ করা হতো। এখন হোটেল বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার হয়। কয়লা পাওয়া তাই দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বেশি পরিশ্রম করেও আগের মতো আায় হচ্ছে না। আমাদের দম ফেলার সময় নাই। কিন্তু সেই তুলনায় কামায় হচ্ছে না ভাই।
তিনি আরও বলেন, বেশি দামে কয়লা কিনতে হচ্ছে। গত বছর এক টিন কয়লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে কিনেছিলাম। এবার তা কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। এছাড়াও গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি। মাংস কাটার দা আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যা গত বছর ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বড় চাকু ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা এখন তার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আগের বছর বটি ২০০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
হিলি বাজারের গোডাউন মোড়ের কামার শ্রী কৃষ্ণ কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তেমন অর্ডার পাচ্ছি না। কাচা লোহা দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। তাই কোরবানির সরঞ্জাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন দা, বটি, ছুরি ও চাকু তৈরির চেয়ে পুরাতন গুলো ধার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বেশি। নতুন তৈরি করে নেওয়া অর্ডার বা বিক্রি কম হচ্ছে। সে কারণে এবার দুশ্চিন্তায় আছি।
গত বৃহস্পতিবার ১৩ জুন কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে হিলির সাপ্তাহিক হাটে আগত দোকানি মানিক চন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানির হাট উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের দা, বটি, চাকু ও ছুরি নিয়ে আসছি। কিন্তু অন্য বারের তুলনায় এবার বেচা বিক্রি অর্ধেক। লোহা ও ইস্পাতের দাম বেশি। আবার কয়লার সংকট কি করি। তাই আমাদের এসব জিনিস বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতা কমেছে। সব মিলে আমার চিন্তায় আছি। কিন্তু কি করবো বাপ দাদার আদি ও জাতি ব্যবসা তাই ছাড়তে পারছি না ভাই।
বিবার্তা/রব্বানী/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]