
‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর’- শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি দিয়ে বিশ্বের কাছে চিলমারী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। তাছাড়া একসময় চিলমারী থেকে অনেকেই ভাওয়াইয়া গানকে বুকে লালন করে দেশ-বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শিল্পীরা হারাতে বসেছে তাদের শিল্পকলা একাডেমি।
প্রায় দশবছর ধরে কোন অস্তিত্ব নেই চিলমারী উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির। উপজেলা প্রশাসনের সঠিক তদারকি ও দায়িত্বহীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকলা একাডেমির কোন কার্যক্রম নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমির কক্ষটি সবসময় বন্ধ থাকে। সরকারি নিয়মানুযায়ী শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনায় ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থাকার কথা থাকলেও এটা শুধু কাগজে-কলমে পরিচালিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাঁর এ স্বপ্নকে কেন বাধাগ্রস্থ করছেন স্থানীয় প্রশাসন? কেনই বা সংস্কৃতি জগৎ থেকে পিছিয়ে রেখেছেন চিলমারীকে- এমন প্রশ্ন সঙ্গীত প্রেমীদের। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে চেয়ার, টেবিল, হারমোনিয়াম, কীবোর্ডসহ সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করা হলেও এগুলো এখন পরিত্যক্ত ও অকেজো অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ সঙ্গীত প্রেমীদের।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আমাদের মনোজগৎ তৈরিতে সহযোগিতা করে। সমাজে যুবাদের মাদক ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
উপজেলা শিল্পকলার নামে যে সরকারি বরাদ্দ আসে সেই অর্থগুলো কোথায় যাচ্ছে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণের মাঝে। দ্রুত সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি পুনর্গঠন করে সঙ্গীত, নৃত্য, চারু ও কারুকলার শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন সাংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রবীণ শিল্পী ও গানের শিক্ষক শ্রী জগদীশ চন্দ্র রায় বিবার্তাকে বলেন, একসময় শিল্পকলা একাডেমির অবস্থা রমরমা ছিল। তখন অনেক সঙ্গীতের সংগঠন ছিল। শিল্পীও বের হয়েছে অনেক। এখন শিল্পকলা একাডেমির ঘর, আছে বাদ্যযন্ত্র আছে- নেই কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে চর্চা না থাকায় সাংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়ছে চিলমারী উপজেলা। প্রবীন শিল্পদের শিল্পকলায় ফিরিয়ে আনলেই সঙ্গীত অঙ্গনে সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত শিক্ষক শিল্পী মো. মহব্বত আলী মজনু বিবার্তাকে বলেন, শিল্পকলা একাডেমির এই হালের জন্য শুধু শিল্পকলাকে দায়ী করলে হবে না। আমি মনে করি এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গীত চর্চার প্রতি শ্রদ্ধা বোধ কম। কারণ অভিভাবকগণ সন্তানদের সঙ্গীত থেকে দূরে রাখতে চায়। এ সময় তিনি স্মার্ট মোবাইল ফোনকে সঙ্গীতের শত্রু হিসাবে দায়ী করেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চিলমারীর সর্বস্তরের মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই সঙ্গীত শিক্ষক।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন বিবার্তাকে বলেন, শিল্পকলার বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও মহাদয়ের সাথে কথা বলবো এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি করে শিল্পকলাকে পুনরায় সক্রিয় করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এবার সঙ্গীত সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে নতুন কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বিবার্তা/রাফি/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]