
চুয়াডাঙ্গায় দেশ ক্লিনিকে মিনারুল ইসলাম নামে এক রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের সময় পায়ুপথের নালী কেটে ফেলার ঘটনায় ক্লিনিকটিতে অস্ত্রপচার সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একইসাথে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, সোমবার (২৫ আগস্ট) জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের একটি দল দেশ ক্লিনিকে পরিদর্শন করেন। এ সময় বিভিন্ন অসংগতি পাওয়ায় অস্ত্রোপচারের সকল কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নজরে আসে। এরপর আমি, জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দেশ ক্লিনিকে পরিদর্শন করেছি। কিছু অসংগতি পাওয়ায় অপারেশন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে একটি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এর আগে ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা ও রোগীর জীবন সংকটে ফেলার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গার আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মিনারুল ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম।
মামলায় আসামী করা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জুনিয়র সার্জারী কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময়, মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান, দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. হাসিবুল হক শান্ত ও প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. ইয়াকুব আলী
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, গত ১২ জুন চুয়াডাঙ্গার দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার ছেল মিনারুল ইসলামকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের পরামর্শে জরুরি ভিত্তিতে এপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সেদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে ডা. মশিউর রহমান অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৪ জুন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর তাঁর পেট ফুলে যায় এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ১৭ জুন তাঁকে আবারও দেশ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এ সময় পরিচালক হাসিবুল হক শান্ত এবং ম্যানেজার ইয়াকুব আলীর পরামর্শে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল হক তন্ময় দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু তাতেও রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
এ অবস্থায় পরিবার যখন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং দীর্ঘদিন নিজেদের হেফাজতে চিকিৎসাধীন রাখে। অবশেষে বাদী ও তাঁর স্বজনেরা জোরপূর্বক রোগীকে ৪ আগস্ট ঢাকার ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে ছয় দিন চিকিৎসার পর তাঁকে বাড়িতে নেওয়া হলেও পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহীর চিকিৎসকেরা দেশ ক্লিনিকের অপারেশনের কাগজপত্র এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানান, অস্ত্রোপচারের সময় চুয়াডাঙ্গার চিকিৎসকেরা অবহেলাজনিত কারণে রোগীর পায়ুপথের নালী কেটে ফেলেছেন। এর ফলে তাঁর দুটি কিডনি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে এবং তিনি এখন মারাত্মক মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বাদীর অভিযোগ, পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট তিনি স্বজনদের নিয়ে দেশ ক্লিনিকে গিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। বাদীর দাবি, এই ভুল চিকিৎসার কারণে তাঁর আত্মীয়ের শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকারও বেশি।
এ ঘটনায় বাদী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৩৮, ৩২৪, ৩০৭, ৪২৭ ও ১১৪ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়েছে।
বিবার্তা/আসিম/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]