ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, মাচায় দুলছে সোহেল রানার স্বপ্ন
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ১৫:২০
ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষ, মাচায় দুলছে সোহেল রানার স্বপ্ন
দিনাজপুর (হিলি) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' এই প্রবাদ বাক্য শুধু পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি কিন্তু বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি কয় জন। দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সোহেল রানা বাস্তব রূপ দেখে দিয়েছে। ইউটিউবে দেখে প্রথমবার তরমুজ চাষ করে এলাকায় সারা ফেলেছে।


তরমুজ একটি মৌসুমি ও রসালো ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। আর এই তরমুজও বাজারে পাওয়া যাবে অসময়ে। হাকিমপুর উপজেলায় প্রথম বারের মতো এবারে অসময়ের তরমুজ চাষ হয়েছে। সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। তাকে দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।


তরমুজ চাষি সোহেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউটিউব দেখে বাড়ির পাশের তিন বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে তিন জাতের তরমুজ (হলুদ, কালো ও সবুজ) চাষ করেছেন। ধানের চেয়ে তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করবে বলে তার আশা।


সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে মাচান পদ্ধতিতে তিন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন সোহেল। এখন মাচায় ঝুলছে হলুদ, কালো এবং সবুজ বর্ণের তরমুজ। সেগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের অন্যরা শখ করে কেউবা কৌতূহলে দেখতে আসছে এবং তারা নিজেরাও চাষ করবে বলে ইচ্ছা পোষণ করছে।


সোহেল রানা বলেন, আমি গ্রামের এক মসজিদে ইমামতি করি। পাশাপাশি অন্য কিছু করার চিন্তা থেকে ইউটিউবে তরমুজ চাষ দেখে আগ্রহী হই। বাড়ির পাশের তিন বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করেছি। গাছগুলোতে ফল ধরেছে। ফলের ভারে মাচা ছিঁড়ে পড়ার অবস্থা। তাই মাচা ঠিক করছি। অল্প সময়ের মধ্যে বাজারজাত করতে পারবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো আয় হবে বলে আশা করছি। তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে তার ব্যয় হয়েছে দুই লক্ষ টাকা। এবারে তেমন লাভ না হলেও আগামীতে বেশি লাভ হবে এমনটাই আশা তার। এই জাতের তরমুজ চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে এবং পাকতে সময় লাগে ৩৫-৪০ দিন। প্রতিটি তরমুজ ২-৫ কেজি ওজনের হবে।


তিনি আরও বলেন গাছে যে ফল আছে, তাতে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো। হলুদ ও সবুজ তরমুজের কেজি ৩০-৪০ এবং কালোটা ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার থাকলে ভালো আয় হবে। চাষ পদ্ধতি দেখে অনেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আগামীতে এই অঞ্চলে চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।


ওই গ্রামের বাসিন্দা অলিউল্লাহ ও নাজমুল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের ছেলে সোহেল রানা। মসজিদে ইমামতি করেন। এবার হঠাৎ দেখি জমিতে মাচন দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার জমিতে মাচন দিয়ে কি করবা? উত্তরে বললো জমিতে ধান চাষ না করে তরমুজ চাষ করবো। তখন বিষয়টা গুরুত্ব দেই নাই। এখন দেখতেছি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে ধান চাষে যত ঝামেলা বাজারে সার, কীটনাশকসহ সব কিছুর দাম বেশি। আবার শ্রমিক সংকট তো আছেই। সব মিলে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ তাই চিন্তা আগামী বছর আমরাও জমিতে তরমুজ চাষ করবো। সোহেল এর কাছে গিয়েছিলাম কিছু পরামর্শ নিয়েছি।


সোহেল রানার তরমুজের জমিতে কাজ করা শ্রমিক এরফান আলী বলেন, আমাদের হুজুর সোহেল রানা নতুন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করায় আমার মতো এই গ্রামের ১০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা ক্ষেতের পরিচর্যা, তরমুজে জালি পরানোসহ সব কাজ করছি। যে হারে গাছে ফল ধরেছে, তাতে বেশ ভালো ফলন হবে।


এ বিষয়ে উপজেলায় হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, উপজেলায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের তরমুজ চাষে আগ্রহী করতে আগামীতে বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করবো। সোহেল রানার জমিতে যে তরমুজ লাগানো হয়েছে সেগুলো উন্নত জাতের এবং অল্প সময়ে ফল ধরে। আর অসময়ে বাজারে এই তরমুজ পাওয়া যাবে।


তিনি আরও বলেন, বেলে মাটিতে তরমুজ চাষ হয়। এখানের মাটি চাষের উপযোগী। দাম ভাল পেলে আগামীতে আবাদ বাড়বে। সেইসঙ্গে চাষাবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে বলে বলেন তিনি।


বিবার্তা/রব্বানী/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com