
গুণে-মানে সেরা চুয়াডাঙ্গার আমের সুনাম রয়েছে সারা দেশজুড়ে। তাই গ্রাহক পর্যায়ে গুণগত মানের আম সরবরাহে ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ঠিক করে দিয়েছে আম সংগ্রহের নির্ধারিত সময়।
জাত ভেদে গাছ থেকে আম সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ তৈরি করা হয়েছে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ মে, বৃহস্পতিবার থেকে পরিপক্ব আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ শুরু হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়।
পরিপক্ব আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের জন্য তৈরীকৃত ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী ১৬ মে থেকে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম, ২৪ মে থেকে হিমসাগর, ৩০ মে থেকে ল্যাংড়া, ৭ জুন থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩), ১৫ জুন থেকে ফজলি এবং ১ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সময় অনুসরণ করে আম সংগ্রহ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে অপরিপক্ব আম পাড়া যাবে না।
আম পাকানো বা সংরক্ষণে কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা যাবে না। অবৈধ উপায়ে আম পাকানো হলে বা পাকানোর উদ্দেশ্যে মজুত করা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এবং নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ মৌসুমে আমের মুকুল বেশি আসেনি। এ ছাড়া ভরা মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতি তীব্র তাপপ্রবাহসহ নানা কারণে আমের ফলন কম হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি অন্তত এক মেট্রিক টন কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমচাষিরা আশঙ্কা করছেন, উৎপাদনের পরিমাণ আরও কম হতে পারে।
বাগানমালিক ও আম ব্যবসায়ীদের দাবি, এ মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় আমের ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে এ বছর ভোক্তা পর্যায়ে এর দামেও প্রভাব পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। প্রতি হেক্টর বাগানে গড়ে ১৪ মেট্রিক টন হিসেবে ৩৪ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল।
তবে এ বছর আম বাগানের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৪ হেক্টরে। বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে হেক্টরপ্রতি ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৭২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭৩৯ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৬২৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে।
হেক্টরপ্রতি ১৩ মেট্রিক টন ধরে চলতি মৌসুমে ২৯ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৪ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন কম।
চুয়াডাঙ্গার অন্যতম বড় আম চাষি রফাতুল্লাহ জানান, গত বছর ৩০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছিলেন। ওই বছরে তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় এবার বাগান ছোট করে আনেন। নিজের ৮ বিঘা জমিসহ মোট ১০০ বিঘা জমিতে এবার আম চাষ করছেন।
তিনি আরও বলেন, এবার আম তৈরিতে যা খরচ হয়েছে, তা তুলতে হলে প্রতি কেজি আম ১০ থেকে অন্তত ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। নাহলে অনেক টাকা লস হবে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, মৌসুমের শুরুতেই আমের মুকুল ঝরে গেছে। তাছাড়া অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে গুটি ঝরে যাওয়ায় গেলো বছরের চেয়ে আমের উৎপাদন কম হবে এ বছর।
তিনি আরও বলেন, জেলাব্যাপী আম সংগ্রহের যে সূচিটি দেওয়া হয়েছে তার বাইরে কেউ অপরিপক্ব আম পাড়তে পারবে না। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবার্তা/আসিম/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]