
জমি থেকে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। বাজারে আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় টান পড়েছে দামে। আলুর দাম কমায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও স্বস্তি ফিরছে বাজারে।
মৌসুমের শুরুর দিকে রাজশাহীর বাজারে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। তবে ভরা মৌসুমের এই সময়ে আলুর দাম কমে বুধবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ টাকা দরে।
ক্রেতারা বলছেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যবসায়ী যেন আলুর দাম না বাড়িয়ে দেয় সেই বিষয়ে বাজার মনিটরিং করতে হবে।
আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলু পুরোদমে তোলা শুরু হয়েছে। বাজারে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তাই দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।
চাষিরা বলছেন, এ বছর শীত আর বৃষ্টিপাতের কারণে আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। জমিতে আলুর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরেও যে গাছগুলো হয়েছে তাতে আশানুরূপ আলুর ফলন আসেনি। ফলে আলু চাষে ফলনের দিক থেকে কৃষক হতাশ হলেও দামের দিক থেকে খুশি তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে।
এ বছর আলু চাষের পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। এছাড়া রাজশাহী জেলার মধ্যে তানোর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়। এবার তানোর উপজেলায় আলুর চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে।
জেলা পবা, তানোর ও মোহনপুর উপজেলার ঘুরে দেখা গেছে, চাষি ও ব্যবসায়ীদের জমি থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় কাটছে। এলাকাগুলোর জমি থেকে আলু তোলার পর সেখানেই বস্তা জাত করা হচ্ছে। কেউ কেউ জমিতেই আলু ওজনের ব্যবস্থা রেখেছেন।
বেশিরভাগ আলু কাঁচা হওয়ায় সেগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া যাদের আলুর পরিপূর্ণ বয়স হয়েছে তারা কোল্ড স্টোরে রাখছেন। তবে অল্প পরিমানে আলু কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে রাখা হচ্ছে। কয়েকদিন পরে পরিমাণ আরও বাড়বে।
চাষি ও ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, এখন যে আলুগুলো তোলা হচ্ছে সেগুলো সরাসরি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো কাঁচা আলু। বেশি দিন রাখা যাবে না। তবে অনেকের আলুর পরিপূর্ণ বয়স হয়েছে। সেই আলুগুলো তুলে কোল্ড স্টোরে রাখছেন অনেকেই। কেউ কেউ ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন।
তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এ বছর আলুর ফলন কম হয়েছে। তারপরও কয়েকদিনে আলুর দাম কমেছে। আলু জমি থেকে তুলে কোল্ড স্টোরে রাখছি। পরে সুবিধা মত সময়ে আলু বিক্রি করব।
অপর কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এবার তুলনামূলক শীত বেশি ছিল। শীতের কারণে আলুর অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হয়েছে। এরপর আবার বৃষ্টি হয়েছিল। সব মিলে আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আশা করছি, এমন দাম থাকলে লাভ হবে।
সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা প্রতি কেজি দরে। এর মধ্যে সাদা আলু ১৮ টাকা ও লাল আলু ২২ টাকা। গত শুক্রবারের তুলনায় আলুর দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কোল্ডস্টোরের ম্যানেজার বলেন, এখনও সেইভাবে কোল্ডস্টোরগুলোতে আলু আসতে শুরু করেনি। এখন জমি থেকে আলুগুলো তোলা হচ্ছে, সেগুলো সাধারণত বিক্রির জন্য। কেউ কেউ আলু উত্তোলন করে কোল্ড স্টোরের রাখছেন। তবে তুলনায় কম। কিছুদিন গেলে আরও চাষি ও ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরে আলু রাখবে।
এ বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় শুনছি আলু ভালো হয়েছে। আবার কিছু কিছু এলাকার চাষিরা বলছেন, তাদের আলুর ফলন ভালো হয়নি। তবে সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে আলুর ফলন ভালো হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, জমি থেকে এখনও আলু সেভাবে তোলা শুরু হয়নি। তাই এখনও ফলনের বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। তবে বাজারে আলুর দাম ভালো আছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছে। ৫০ শতাংশ আলু উঠতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। তখন বোঝা যাবে আলুর ফলন কেমন হয়েছে।
বিবার্তা/রানা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]