রাজধানীতে কুকুর হত্যার অভিযোগে থানায় জিডি, হবে ময়নাতদন্ত
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৩৫
রাজধানীতে কুকুর হত্যার অভিযোগে থানায় জিডি, হবে ময়নাতদন্ত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর আফতাবনগরে লোহার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পোষা কুকুরকে বেআইনিভাবে হত্যার হত্যার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন রোমানা আফরোজ এক ভুক্তভোগী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আফতাবনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। কুকুরটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। অভিযোগকারীর দাবি, এলাকার নিরাপত্তা কর্মীরা কুকুরটিকে হত্যা করেছে।


রাজধানীর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) রোমানা অভিযোগ করেন, আফতাব নগরের লোহার ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তায় থাকা ১০টি কুকুরের দেখাশোনা করেন, নিয়মিত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ও খাওয়ান। তবে আফতাবনগর সোসাইটির সিকিউরিটি গার্ড ও আনসার সদস্যদের কথা কাটাকাটি হত। আফতাবনগর সোসাইটির কিছু নিরাপত্তারক্ষী কোনো কারণ ছাড়া প্রায়ই কুকুরগুলোকে লাঠি দিয়ে মারেন। তিনি এর প্রতিবাদ করলে নিরাপত্তারক্ষীরা কুকুরের ক্ষতি করা হবে বলে তাকে হুমকি দেন। সেই সাথে তাকে এবং তার পোষা কুকুরগুলোকে ক্ষতি সাধনের হুমকি দেয়। বুধবার সকাল ৭টার দিকে রোমানা কুকুরগুলোকে খাওয়াতে গেলে তাদের মধ্যে একটিকে খুঁজে পাননি।


রোমানা বলেন, বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে খাবার দেয়ার সময় একটি কুকুর নিখোঁজ থাকায় সিকিউরিটি গার্ড ও আনসার সদস্যদের জিজ্ঞাসা করি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জানায় রাত ১১টা ১০ মিনিটে ট্রাক চাপায় কুকুরের মৃত্যু হয়। পরে খোঁজাখুঁজির পর প্রায় ৫ মাইল দূরে এলাকার এম ব্লকের পেছনে কুকুরটির মরদেহ দেখতে পাই। কুকুরটির শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। গলায় বেল্টও ছিল না।


কুকুরের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করেছে বলে জানায় বাড্ডা জোনের এসি রাজন কুমার সাহা।


তিনি বলেন, আমরা সেখানে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। যদি কেউ অপরাধী হয় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন গাজী বলেন, কুকি নামের কুকুর হত্যা সন্দেহে গতকাল বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রোমানা আফরোজ একটি জিডি করেন। তিনি কুকুরটির দেখাশোনা করতেন। জিডির পরিপেক্ষিতে কুকুরটির মরদেহ কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


ময়নাতদন্ত শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।


এদিকে আফতাবনগর সোসাইটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।


কুকুরগুলোর আরেকজন মালিক উৎস জানায়, ট্রাক চাপায় কুকুরটি আসলেই মারা গেছে কিনা সেগুলো সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারব। তবে বিনা কারণে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড যে করেছে তাকে প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ে আসব।


৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রাণীপ্রেমী সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ারের (প ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে ২০১৯ সালে নতুন আইন করেছে সরকার। যদিও আইনটির প্রয়োগ কম। ভুক্তভোগীরা থানায় জিডি করলেও সেখান থেকে সঠিক বিচার পাওয়া যায় না। নতুন আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতিত, কোন আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোন অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করবেন না। এই ধারাটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কারণ স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এই লিখিত অভিযোগ দেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন। প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও অধিক নজরদারির প্রয়োজন।


তিনি বলেন, আমাদের সমাজে পশু-পাখির প্রতি সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখায়। এদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা এবং মানবিক আচরণ দেখানো আমাদের সবার দায়িত্ব।


উল্লেখ্য ‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট ১৯২০’ বাতিল করে ২০১৯ সালে প্রাণিকল্যাণ আইন প্রণয়ন করে সরকার। প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রাণিকে ওষুধ অথবা বিষ মেশানো খাবার খাওয়ান বা বিষ প্রাণির দেহে প্রয়োগ করেন, এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেন বা করতে সহায়তা করেন এবং এতে প্রাণির মৃত্যু বা স্থায়ী অঙ্গহানি অথবা স্বাভাবিক আকার ও কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ আইনে সাজা হিসেবে অনধিক ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। সর্বোচ্চ সাজা অনধিক ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য।


অ-আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেসব অপরাধকে বোঝায়, যা সংঘটিত হওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হয়। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করা যায় না।


এদিকে প্রাণিকল্যাণ আইনে বলা আছে, এ আইনের অধীন অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও (মোবাইল কোর্ট) হবে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের আওতায় আইনটি এখনো তফসিলভুক্ত হয়নি।


এরআগে ২০১৮ সালের ১০ মে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কুকুর হত্যার দায়ে কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়। রাজধানীর রামপুরায় দুই মাসহ ১৪ কুকুর ছানাকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যার দায়ে সিদ্দিক নামের এক যুবককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।


প্রথমবারের মতো এই প্রাণি হত্যার মামলার আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফোরকান। মামলার বাদী ছিলে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারের (প ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাকিবুল ইসলাম এমিল।


এর আগেও প্রাণি হত্যার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। কিন্তু সেসব মামলায় শুধু অর্থদণ্ডের মাধ্যমে পার পেয়ে যান আসামিরা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com