রাজশাহীতে এক টাকায় সিঙ্গারা, মাসে আয় অর্ধলক্ষ
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৬
রাজশাহীতে এক টাকায় সিঙ্গারা, মাসে আয় অর্ধলক্ষ
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এক টাকার যেন কোনো দামই নেই। সাহায্য হিসেবে এক টাকা পথেঘাটের ভিক্ষুকরাও নিতে চান না। কিন্তু এক টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সিঙ্গারা! সাথে লবন, মরিচ ও ধনিয়াপাতার চাটনি ফ্রি! ফুটপাতে এ সিঙ্গারাসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি করে মাসে অর্ধলাখ টাকা আয় করছেন এক যুবক।


রাজশাহী নগরীর সাধুর মোড়ে পাওয়া যাচ্ছে এক টাকার এ সিঙ্গারা। পথের ধারে একটি ছাত্রাবাসের ফটকের সামনে সিঙ্গারা, পিঁয়াজু, ছোলা, মাশরুম চপ, আলু ও ডিমের চপসহ তেলে ভাজা ১০ রকম খাবার বিক্রি করছেন মো. সোহাগ হোসেন নামে এক যুবক। তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হাট কানপাড়া এলাকার মো. কামরুজ্জামানের ছেলে। নগরীর সাধুর মোড় এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন তারা।


শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুলেও বেশিদূর পড়ালেখা করা হয়নি সোহাগের। গত বছর ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেও সম্প্রতি পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন তিনি। তেলে ভাজা খাবার বিক্রি করে সোহাগ বর্তমানে স্বাবলম্বী।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আটা দিয়ে খাবার ভাজছেন সোহাগ। মধ্যবয়সী একজন নারী সেগুলে তুলে সাজিয়ে রাখছেন। ক্রেতারা আসলে ছোট প্লেটে করে তুলে দিচ্ছেন, আর টাকা রাখছেন ড্রয়ারে। পাশে থাকা বেঞ্চে বসে এসব খাবার খাচ্ছেন শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এছাড়া ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পার্সেল করে দিচ্ছেন ওই নারী। মাঝেমধ্যে তিনি কড়াইতে ভাজতে থাকা খাবার উল্টিয়ে দিচ্ছেন। আর ওই যুবক বিক্রি করছেন। রিকশা থামিয়ে অনেকে খেতে আসছেন তাদের ভাজা এসব খাবার।



এসময় সোহাগ হোসেন জানান, ওই নারী তার মা, নাম শিরিনা বেগম। মা-ছেলে দুজনে মিলে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব তৈরি করে বিক্রি করেন। তার বাবা মো. কামরুজ্জামানও ফুটপাতে চা বিক্রি করেন। এতেই তাদের সংসার চলে যায়।


সিঙ্গারাসহ সস্তা দামে মুখরোচক খাবারে ক্রেতারা খুশি। দোকান দেওয়ার শুরু থেকে সোহাগের নিয়মিত কাস্টমার মির্জাপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। সন্ধ্যাবেলা এসব ভাজাপোড়া কিনতে আসেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে কথা হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি তো অনেকদিন থেকে এখানকার সিঙ্গারা, আলুচপ, পিঁয়াজু, পুরি খাই। দাম হিসেবে এগুলো অনেক ভালো। খেতেও অনেক স্বাদ লাগে। বাড়িতেও নিয়ে যাই। সেজন্য আজকেও এসেছি। শীতে গরম গরম ভাজা এগুলো ভালোই লাগে।


মো. শাকিল নামে এক রিকশাচালক বলেন, অন্য জায়গায় দাম বেশি। তাই এখানে খেতে আসি। দাম কম, খেতেও তো ভালই লাগে। সবুজ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যায় বের হলে এখানে এসে সিঙ্গারা খাই। বন্ধুরা অনেক সময় প্রতিযোগিতা করে খাই। এ দামে শহরে কোথাও এরকম পাওয়া যায় না।


সোহাগ বলেন, এ ব্যবসাটা মূলত আমার চাচার ছিল। চাচা শামসুজ্জামান প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করেছিলেন। আমি তখন ছোট ছিলাম। চাচা মারা গেছেন গত রমজান মাসে। এরপর থেকে আমি এবং মা এখানে ভেজে বিক্রি করছি। সোহাগ হোসেন আরও বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমার ব্যবসা। তারা বেশি আসলে দৈনিক দুই আড়াই হাজার টাকার বিক্রি হয়, মাসে প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা ইনকাম আসে। আর কম হলেও দিনে এক দেড় হাজার টাকা বেচাবিক্রি হয়।


সোহাগ হোসেন বলেন, মাত্র ৮০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। সাধুর মোড়ে ছাত্রাবাসের গেটের সামনের জায়গায় এটা করছি। মাসে এক হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া দেওয়া লাগে। সামুচা ৫ টাকা, পুরি ৩ টাকা এবং রসুন চপ, আলু চপ ও মাশরুম চপ ৫ টাকা করে বিক্রি করি। কিন্তু সিঙ্গারার দাম এক টাকাই রেখেছি।


এ প্রসঙ্গে সোহাগ হোসেন বলেন, ‘তেল, আলু ও পেয়াজের যা দাম; এক টাকায় সিঙ্গারা বিক্রি করে কোনো লাভ থাকে না, তবু বিক্রি করছি। কারণ, অনেক কাস্টমার সিঙ্গারা কিনতে এসে আরও অনেককিছু কেনে। তখন পুষিয়ে যায়। এতে কম দামে বেশি বিক্রি হয়। এটা ব্যবসা পলিসি বলতে পারেন।’


এসময় তার মা শিরিনা বেগম বলেন, ছেলেডার পড়ালেখা হলো না। টাকাপয়সার সমস্যা। এখন ব্যাটাডাক (ছেলেকে) হেলেপ (সাহায্য) করি। চলে মোটামুটি। পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে এ ব্যবসা শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।


বিবার্তা/সোহান/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com