চিলমারীতে রাস্তা নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২২:১৪
চিলমারীতে রাস্তা নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুটি রাস্তার কাজ শেষ না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এদিকে এক বছরেও সড়কে কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দেওয়া বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে কাজে দেরি করছেন বলে দাবি উপজেলা প্রকৌশলীর। তবে কাজে ১% ছাড় দিতে রাজি নন এই কর্মকর্তা।


এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (আইআর আইডিপি-৩) এর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার থানাহাট ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ মিটার সড়ক পাকাকরণসহ ২ ফুট মাপের ৩টি ইউড্রেন ও ৫ ফুট মাপের ১টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পলাশ শিমুল ট্রেডার্স। যার চুক্তিমূল্য ছিল ৯৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৭৯ টাকা। দিজেন্দ্রনাথের বাড়ি হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক পর্যন্ত ১ হাজার ২৬০ মিটার রাস্তা পাকাকরণসহ ২ ফুট মাপের ৩টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় কুড়িগ্রামস্থ মেসার্স স্বপ্নীল এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩০৯ টাকা। দুটি কাজই লটারিতে প্রাপ্ত ঠিকাদারের নিকট থেকে কিনে নেন উলিপুর উপজেলার ঠিকাদার মফিজুল হক (জর্দা হাজি)।


কাজ দুটি ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি কিছু কিছু স্থানে দায়সারা ভাবে মাত্র ২০%-৩০% কাজ করা হয়েছে। যেটুকু কাজ করা হয়েছে তাও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে শিডিউল বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।



সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা রাস্তায় ডিপগ্রামের মাসুদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত মাত্র ৭০০ মিটার এলাকায় নিম্নমানের সামান্য খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। নয়াবাড়ী গ্রামে রাস্তার ধারে প্যালাসেটিং এর পরিবর্তে ড্রামের টিন, বাঁশের খুঁটি লাগানো হয়েছে। রাস্তার প্রস্থ ১০ ফুটের স্থলে ৭ ফুটে খোয়া ফেলানো হয়েছে। রাস্তাটিতে ৩টি ইউড্রেন ও ১টি কালভার্ট নির্মাণের কথা থাকলেও এখনও ইউড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি।


নয়াবাড়ী গ্রামের মোজাম্মেল হক বিবার্তাকে জানান, তিনি ঠিকাদারের লোকদের ড্রামের টিনে বাঁশের খুঁটির পরিবর্তে কংক্রিটের খুঁটি লাগাতে বললে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। ওই এলাকার আবু বকর সিদ্দিক, সবুজ মিয়া, সেকেন্দার আলী, ডিপগ্রামের দারোগ আলীসহ অনেকে জানান, যেটুকু কাজ করা হয়েছে তা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে হয়েছে। কাজ শুরু করার বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় পথচারীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।


অপরদিকে দিজেন্দ্রনাথের বাড়ি হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক পর্যন্ত রাস্তায় দেখা গেছে দিজেন্দ্র নাথের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সামান্য প্যালাসেটিং দিয়ে কয়েক গাড়ি বালু ফেলে রাখা হয়েছে। অপর প্রান্তে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়কে মাত্র ৩শ মিটার এলাকায় নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। দায়সারাভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও বাকি দুটি নির্মাণ করা হয়নি। বিভিন্ন পুকুরের পার্শ্বে প্যালাসেটিং দেয়ার কথা থাকলেও ধীরেন্দ্র নাথের বাড়ির পুকুরে সামান্য প্যালাসেটিং দেয়া হয়েছে যা পানির নিচে পড়ে গেছে।



অধিকারী পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম, বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, আতিকুর রহমান, ধিরেন্দ্র নাথ বর্মন, সানোয়ার হোসেনসহ অনেকে বিবার্তাকে জানান, অনেক আগে কাজ শুরু করা হলেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সামান্য কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। অধিকারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিম্নমানের খোয়া ও বালু পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দিনেশ চন্দ্র রায় বলেন, কাজ ভাল করার কথা বললে ঠিকাদারের লোক বলে শিডিউল দেখে আসেন।


ঠিকাদার মফিজুল হক (জর্দা হাজী) এর সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।


থানাহাট ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত কাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শের আলী বিবার্তাকে জানান, কাজ ভালো করানোর জন্য খোয়া টেস্টে পাঠিয়েছি। টেস্টের ফলাফল আসলেই কাজ শুরু হবে। কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে।


উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজুর রহমান বিবার্তাকে জানান, কাজ দুটি মফিজুল হক জর্দা সাহেব কিনে নিয়েছেন। আমরা তাকে বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে কাজ করতে দেরি করেছেন। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে, সময় বৃদ্ধি করে কাজ শেষ করা হবে। ওই ঠিকাদার আমাদের খুব হ্যারেজমেন্ট করেছে। নিশ্চিত থাকেন আমাদের পক্ষ থেকে কাজে এক পার্সেন্টও ছাড় পাবে না। কাজ সঠিকভাবে আদায় করে নেয়া হবে।


বিবার্তা/রাফি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com