প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে ভাতিজাকে হত্যা, ১১ বছর পালিয়েও পার পেলো না দম্পতি
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:১৬
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে ভাতিজাকে হত্যা, ১১ বছর পালিয়েও পার পেলো না দম্পতি
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামে ৭ বছরের শিশু চম্পা হত্যা মামলার প্রধান আসামি মিন্টু বসুনীয়া ও স্ত্রী মোর্শেদা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুর বড়বাড়ি জয় বাংলা থেকে ওই দম্পত্তিকে আটক করা হয়েছে। ওই দম্পতির বাড়ি উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামে।


১২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে তাদের কুড়িগ্রাম আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় উলিপুর থানা পুলিশ।


জানা গেছে, ২০১৩ সালে উলিপুর থানাধীন দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামে আশরাফ ডাক্তারের পুকুরে মিন্টু বসুনিয়া ও মো. চাদ মিয়া ওরফে ভগলু (আসামি মিন্টুর আপন বড় ভাই) অন্যান্য সঙ্গী সাথীসহ মাটি কাটতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার এ মামলার বাদী বজরুল এর সাথে আসামি মিন্টু বসুনিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় মিন্টু বসুনিয়া ও চাদ মিয়া বজরুলকে মারপিট করে। মারপিটের ফলে বজরুল গুরুত্ব অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অতঃপর গুজব সৃষ্টি হয় যে, বজরুল মারা গেছে।


পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার দায় থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য এবং প্রতিপক্ষকে পাল্টা মামলায় ঘায়েল/ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম পরস্পর যোগসাজোসে অত্যন্ত সু-কৌশলে আপন ভাতিজি অর্থাৎ চাদ মিয়ার ৭ বছরের শিশু কন্যা চম্পা’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে রাখে। পরে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে আসামি মিন্টু মিয়াই বাঁশ ঝাড় থেকে চম্পার লাশ সনাক্ত করে। এ ঘটনায় মামলা হয় প্রতিপক্ষ বজরুল পরিবারের বিরুদ্ধে। ধৃত আসামিসহ বাদীর লোকজন প্রতিপক্ষ বজরুল এর ভাতিজা হাফিজুলকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর তদন্ত মো. জাকির উল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ আইনানুগ তদন্তকালীন সময়ে ঘটনার ভিন্নরূপ মোড় নেয়।


তদন্তের এক পর্যায়ে বাদীর আপন ভাই গ্রেফতারকৃত আসামি মিন্টু বসুনিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামি মিন্টু বসুনিয়া প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজ স্ত্রীর সহযোগীতায় তার আপন ভাতিজি চম্পা’কে হত্যা করার ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পান।


জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামি মিন্টু বসুনিয়াকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। তদন্তকারী অফিসার বজরুল পরিবারগংদেকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দিয়ে আসামি মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন।


পরে আসামি মিন্টু বসুনিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমসহ দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর যাবৎ আত্মগোপনে যায়।


পরবর্তীতে অফিসার ইনচার্জ, উলিপুর থানাসহ একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে গ্রেফতারী পরোয়ানামূলে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় গাজীপুর র‍্যাব-৩ এর সহযোগিতায় উলিপুর থানা পুলিশের চৌকস টিম আসামিদেরকে গাজীপুর জেলার বড়বাড়ি জয় বাংলা তিন রাস্তার মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।


কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রুহুল আমীন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। আসামি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে। ২০১৩ সালের শিশু হত্যা মামলার মূলহোতা দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গ্রেফতার করলো উলিপুর থানা পুলিশ যা সম্ভব হয়েছে সুষ্ঠু পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে।


বিবার্তা/বিপ্লব/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com