ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে জীবনের উপর হতাশাগ্রস্ত হয়ে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে এক মেধাবী শিক্ষার্থী। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর নাম ফিরোজ মোল্যা। সে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। ফিরোজ (১৮) ও তার ছোটভাই ফাহিম (১২) বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতো।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, শৈশবেই আত্মহত্যাকারী ফিরোজের পিতা নিরুদ্দেশ হলে মা ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গায় তাদের রেখে অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতো। ফিরোজ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতো।

থানা সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করে। পরে শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সাথে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

সুইসাইড নোটে ফিরোজ লেখে, ‘আমি জানি আমি কি করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু, আমার কাছে যে আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিল। হয় তো আমার জীবনের চেয়েও দামি। আমরা যেই সমাজে বাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগ মাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনোই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনো কষ্ট করতে, পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা! চির বিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’

এ ব্যাপারে মৃতদেহ উদ্ধারকারী বোয়ালমারী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাত ৯টায় মৃতদেহ উদ্ধার করে বোয়ালমারী থানায় আনা হয়েছে। তার শোবার ঘর থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিবার্তা/মিলু/সউদ