শিরোনাম
বন্ধ পাবনা চিনিকলের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে ঋণের বোঝা
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:১২
বন্ধ পাবনা চিনিকলের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে ঋণের বোঝা
পাবনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় ৬০ একর জমির ওপর পাবনা সুগার মিল স্থাপিত হয়। ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের মাড়াই মৌসুম থেকেই চালু হয় কারখানাটি। মিল প্রতিষ্ঠার পর এলাকায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় আখ চাষ। তবে শুরু থেকেই লোকসান গুনতে থাকে চিনি কলটি।


লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকায় ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় বন্ধের নোটিশ দেয়। এরপর থেকেই আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায়।


সরেজমিনে দেখা যায়, মিলের প্রবেশ পথের ঢালাই ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পাশেই সাইনবোর্ডের ভগ্নদশা। ভেতরে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজের জন্য এমডিসহ হাতেগোণা কয়েক জন কর্মচারী ছাড়া কারো দেখা মেলেনি।


খোলা আকাশের নিচে জঙ্গল আর লতাপাতায় ঢাকা পড়েছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক যানবাহন ও ট্রলি। যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা ধরে বিনষ্ট হচ্ছে। মিলের ভবন ও আশপাশে স্থাপিত দোকানপাটগুলোর বেহাল দশা। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা পাবনা সুগারমিল এখন নীরব ও জনশূন্য।


জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে ২০১৮ সালে চিনি কলটি বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালে চিনি কলটি বন্ধ হওয়ার তিন মাস আগে শুরু হয় ইটিপির নির্মাণকাজ। আনা হয় যন্ত্রপাতি। চিনি কল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ইটিপির নির্মাণ কাজও বন্ধ। বর্তমানে ইটিপির জন্য আনা যন্ত্রপাতি গুদামেই নষ্ট হচ্ছে।


মিল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মিলটির প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। তাদের অনেকেই চলমান অন্যান্য চিনিকলে কর্মরত। কেউ কেউ পেশা বদলে সংযুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়। বর্তমানে ১০ জন কর্মকর্তা, ১৭ জন কর্মচারী ও ৩০ জন প্রহরী রয়েছেন।


পাবনা চিনি কলের ১০টি আখ উৎপাদন জোন ছিল। বন্ধ হওয়ার পর চারটি জোনকে পার্শ্ববর্তী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে বাকি ছয়টি জোনকে নাটোর চিনি কলের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আট জোনেরই আখ উৎপাদন স্থগিত হয়ে গেছে। আখমাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউজ, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।


স্থানীয় আখচাষি আবুল কাসেম বলেন, ‘চাষকৃত আখ আমরা এই চিনি কলে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতাম। মিল বন্ধের কারণে আখের পরিবর্তে এখন অন্য ফসল আবাদ করছি।’


জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু বলেন, আখ চাষ অব্যাহত রাখতে হলে চিনিকল চালু করতে হবে। কৃষকদের উৎপাদিত আখ বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। জেলার ৯ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক মিলে আখ সরবরাহ করতো। বন্ধের পর কৃষকরা বেকায়দায় পড়ে আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে।


বাংলাদেশ আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আখচাষি সমিতির সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, দেশের চিনিশিল্পকে রক্ষা করতে হলে এবং চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুতই সব কটি চিনি কল চালু করা জরুরি। চিনিকলের যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেলে সরকারের বড় লোকসান হবে। আধুনিকায়ন ও বহুমুখী উৎপাদনে গেলে প্রতিটি চিনি কলই লাভের মুখ দেখবে।


মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের আগের বছর পাবনা সুগার মিলে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। লোকসান আর দেনার দায়ে তিন বছর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় মিলটি বন্ধ হয়। মিল বন্ধ থাকলে স্থাপনাসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। মিল বন্ধ থাকলেও ঋণের সুদ বাড়ছে। সরকার উদ্যোগ নিলে পুনরায় মিলটি চালু করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।


বিবার্তা/পলাশ/সউদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com