ভোলার চরফ্যাশনে জাল কাগজপত্র তৈরি করে কৃষি শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত হন মো. নিজাম উদ্দিন (হুমায়ুন সরমান)। প্রথমে তিনি যোগ দেন ভোলার চরফ্যাশনের লুৎফুন্নেছা মহিলা আলিম মাদ্রাসায়। পরে ঘুষ দিয়ে চরফ্যাশনের চরমাদ্রাজ ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এমপিওশিটে ‘এ জি টি’ এর পরিবর্তে ‘এল ই সি’ বসিয়ে নেন নিজের খেয়াল-খুশি মতো।
অল্প সময়ের ব্যবধানে অধ্যক্ষ পদ দখল করে বসেন মো. নিজাম উদ্দিন। এক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেন তিনি। গভর্নিং বডি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের ডিজির প্রতিনিধি ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সদস্যের সই জাল করেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার আগের অধ্যক্ষ ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরে গেলেও নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দেখান আরও ছয়মাস (২০১৬ সালের ২৫ জুন) আগে থেকে। এ বাবদ তিনি বেতন-ভাতাও তোলেন।
জালিয়াতিতে মহাপারদর্শী হয়ে ওঠা নিজাম উদ্দিনের এমন কর্মকাণ্ড তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন ভোলা জেলার শিক্ষক মো. আবদুল্যাহ। গত ১৪ জুলাই মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তিনি এ অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে মাদরাসা অধিদফতরের প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। যার স্মারক ন- ৫৭. ২৫. ০০ ০০. ০০ ১. ০৯. ০০ ১.২৩.৩১৫। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) নোটিশে সই করা হলেও তা বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মো. নিজাম উদ্দিন চরমাদ্রাজ সিনিয়র মাদরাসা জাল সনদ ও ইনডেক্সের মাধ্যমে ভুয়া অধ্যক্ষ নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা আত্মসাৎ করে আসছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষি শিক্ষক পদের যোগ্যতা না থাকলেও আপনি জাল কাগজ সৃজন করে লুৎফুন্নেছা মহিলা আলিম মাদরাসার কৃষি শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত হন, যার ইনডেক্স নম্বর-২০১৯২৪১।
নোটিশে আরো বলা হয়, পরে এ ইনডেক্স ব্যবহার করে আপনি চরমাদ্রাজ ফাজিল সিনিয়র মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ নেন এবং এমপিওশিটে পদবি এ জি টি এর পরিবর্তে এল ই সি স্থাপন করেন। অতঃপর আপনি গোপনে গভর্নিং বডি, ডিজির প্রতিনিধি এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। এছাড়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ২৮/০২/২০১৭ তারিখে অবসরে গেলেও আপনি অধ্যক্ষ পদে ২৫/১৬/২০১৬ তারিখে যোগদান করেন।
এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে মাদরাসা অধিদফতরের প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসাইনের কাছে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে চরমাদ্রাজ ফাজিল সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। সঠিক নিয়মের আমার নিয়োগ হয়েছে। এর আগেও নামে-বেনামে আমার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগের জবাব দেব।
এছাড়া মো. নিজাম উদ্দিন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামালীগের চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চরমাদ্রাজ ইউনিয়র আওয়ামী ওলামালীগের সভাপতি।
বিবার্তা/শাহীন/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]