শিকলে বাঁধা মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেনাজের জীবন, অর্থের অভাবে বন্ধ চিকিৎসা
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৫
শিকলে বাঁধা মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেনাজের জীবন, অর্থের অভাবে বন্ধ চিকিৎসা
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাচারিপাড়ার বাসিন্দা মোছা. মেহেনাজ মিরা। বয়স মাত্র ২৫। এ বয়সে সবাই যখন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত তখন কিনা তাকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন পার করতে হচ্ছে। মেহেনাজ টানা এক যুগ ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এখন শিকলে বাঁধা। এই অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে।


পরিবারের সদস্যরা বলছে, প্রাথমিকে পড়া অবস্থায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেনাজ। পরিবারের সামর্থ না থাকায় আটকে আছে চিকিৎসা। আর চিকিৎসকরা বলছেন, সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের চিকিৎসা কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালেই সম্ভব।


মেহেনাজের প্রয়োজন একটুখানি সহযোগিতা যার মাধ্যমে চিকিৎসা করে বাঁচতে চান। স্বাভাবিক জীবনযপানে ফিরতে চান আর দশটা নারীর মতো। শিকলে বাঁধা এ নারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত নুর মোস্তফার মেয়ে।


মেহেনাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙা ঘরে তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই কারো উপস্থিতি ছাড়াই একাই কথা বলছে সে। মাঝেমধ্যে হাসছেও সে। ডান পায়ে দীর্ঘদিন ধরে শিকল বেঁধে রাখায়, পচন ধরেছে পায়ে। এখন বাম পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে।



বাবা মায়ের মৃত্যুর পর দরিদ্র পরিবারের বড় ভাই আর ভাবীই তার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন খাওয়া গোসল সবই করাতে হয় বড় ভাই হাসানের। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তার। দুই বছর ধরে সব চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে অর্থ সংকটে।


নৈশ প্রহরী বড় ভাই হাসান বলেন, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় পাবনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। কোন লাভ হয়নি। আমি নৈশ প্রহরীর চাকরি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার বড় ভাই চা বিক্রি করেন। আমাদের পক্ষে বোনের চিকিৎসা খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজসেবা থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে মেহেনাজকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। মাসের পর মাস তার পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয়। কোন ভাবে যদি বোনটার সুচিকিৎসা করাতে পারতাম, আমরা খুবই উপকৃত হইতাম।


স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রশাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কাজল বলেন, মেহেনাজের পরিবার অনেক দরিদ্র। দুই ভাই নিজেদের পরিবারের ভরণ পোষণ করতেই হিমসিম খায়। এর উপর মেহনাজের জন্য প্রতিনিয়ত চিকিৎসার খরচ তাদের পক্ষে চালানো কঠিন। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে, একটি স্থায়ী সুচিকিৎসা করানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যা আর চিকিৎসায় মেহেনাজ সুস্থ হতে পারে।


স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল হক মনির বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া সরকারি যেকোন সুযোগ-সুবিধা আসলে, আমরা তাদের পরিবারকে দেয়ার চেষ্টা করি। তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে মেহেনাজের সুচিকিৎসা করানো সম্ভব।



উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সাহা বলেন, আমাদের হাসপাতাল থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে তাকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা একমাত্র মানসিক হাসপাতালেই সম্ভব। সুচিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব হবে। তবে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে উন্নতির হার বেশি।


বিবার্তা/মনির/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com