শিরোনাম
‘ভূত আতঙ্কে’ হাঁড়িটানা গ্রামবাসী
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৮
‘ভূত আতঙ্কে’ হাঁড়িটানা গ্রামবাসী
বরগুনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দুপুর গড়াতেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব চলে আসে গ্রামজুড়ে। কখনও নিম গাছের ডালে, কখনও আবার বট গাছের ডালে বসে কাঁদে নারী কণ্ঠে কেউ। আবার কখনও পরিত্যক্ত বাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে হাসে গৃহবধূ। আর এতেই ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে বরগুনার পাথরঘাটার হাঁড়িটানা গ্রামে।


এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। আতঙ্কের পাশাপাশি মানসিক বিপর্যস্তের মধ্যে পড়েছেন অনেকে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ভাইরাল হয়।


ভূত আতঙ্ক নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, ভূত বা শয়তানের আখরা রয়েছে এলাকায়, অন্য পক্ষ বলছে এলাকায় কোনো ভূত নেই, স্থানীয় মাদক ও চুরির কৌশল করতেই এই অপপ্রচার।


ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসীদের একটা অংশ সন্ধ্যা হলেই বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকি বাচ্চাদেরও সন্ধ্যার পর ঘরে সাবধানে রাখছেন পরিবারের লোকজন। গ্রামে রয়েছে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। হাঁড়িটানা গ্রামের বাসিন্দাদের কারও কারও রয়েছে ভৌতিক সব অভিজ্ঞতা।


বিষয়টিকে জিন-শয়তানের কর্ম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন মুন্সি। তবে ভূতের ভয়ে এলাকাবাসী পালিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।


জাকির হোসেন মুন্সি বলেন, পবিত্র কোরআনে জিন এবং ইনছানের কথা রয়েছে। শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে মানুষ অনেক সময় খারাপ কাজে ধাবিত হয়। আমাদের বাড়ির মধ্যে শয়তানের আছরে প্রায় ৭ বছর আগে কদভানু নামে একজন নারী মারা যান। রাতে স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, সকালে বাড়ির পাশে পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়। এভাবে আমাদের বাড়ির মধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে রাতের আঁধারে মারধর করেছে এমনকি গভীর রাতে নাম বলেও ডাকে।


তিনি আরো বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে এলাকায় ভূতের ভয়ে মানুষশুন্য তা সঠিক নয়। ওই সংবাদের কারণে দূর-দূরান্তের আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিতরা আমাদের গ্রামের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে।


তবে বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মেডিকেল সায়েন্সে এমন কিছুই নেই। রাতে অশরীরী কোনো কণ্ঠস্বর, অদ্ভুত দর্শন কিছু, মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাওয়া। অনেক মানুষই হয়তো তাদের জীবনে এমন ভুতুড়ে কিছু অনুভব করেছেন যার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ভূত বা অতিলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। তার ব্যতিক্রম নয় বরগুনার পাথরঘাটা হাড়িটানা গ্রাম। সচেতন মহল বলছে গ্রামের মানুষের মাঝে এমন আষাঢ়ে গল্প যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে।


ওই এলাকার ইউপি সদস্য মো. শহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন ভূত বলতে এখানে কিছু নাই। শুধু কিছু লোক যারা গাঁজা সেবন করে ও চুরি করে বেড়ায় তারা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে যাতে করে ঘর খালি হয়ে যায় এই সুযোগটা গ্রহণ করার চেষ্টা করতে পারে।


এদিকে গ্রামে ভূতে আক্রমণ বিষয়টি লোকমুখে প্রচারিত গুজব বা মনগড়া বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার। ভূত আতঙ্কে গ্রামবাসীর অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয় বলে জানালেন তিনি।


ওসি বলেন, আমরা একটি টিভি চ্যানেলে ভূত আতঙ্কে বাড়ি তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে এমন খবর দেখি। এরপর ওই এলাকায় যাই। সেখানের ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ যারা ভূত আছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন ওই প্রতিবেদনে তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা মনগড়া। সাধারণত গ্রামে রাতে একা হাঁটলে ভয় হয়, কিন্তু ভূত এটা সঠিক নয়।


তাছাড়া ভূত আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছাড়া হয়েছে এমন তথ্যও সঠিক নয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তবুও আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করেছি। আতঙ্ক না হতে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছি।


বিবার্তা/লিমন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com