চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালাবেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর আগে গত ২৩ মে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় কাঁচা বাজার ও সড়কের পাশের দুই শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দিয়েছিলেন সিডিএ। দিনব্যাপী এই অভিযানে তখন নেতৃত্ব দেন স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী।

ওই সময় বিনা নোটিশে অভিযান চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এখন শোনা যাচ্ছে, আগামীকাল বা পরের দিন আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালাবেন সিডিএ। যদিও সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন না। তিনি কৌশলী ভাবে জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনো চিঠি পাননি।

জানা যায়, পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার ও পাশের সিডিএ খেলার মাঠ ও কয়লার মাঠের জায়গায়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) এর দখলীয় ও মালিকানাধীন জমি বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির।

সিডিএ জানিয়েছেন, অধিগ্রহণ করা জমিটি রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট জমি। ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এলএ মামলা ও বিএস খতিয়ান মূলে জমিটি সিডিএ’র।

সিডিএ আরও বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে।

ওই জমিতেই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবত কাঁচা বাজার বসিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরেও সড়ক প্রশস্ত কিংবা স্থায়ী বাজারের জন্য কোন প্রকল্পও গ্রহণ করেনি সিডিএ।

বরং পুনরায় উচ্ছেদ করা হয়েছে দখলদারদের। ফলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তার ওপর ঠেলায় বা ভ্যানে কাঁচাবাজার বিক্রি করছেন। এখন ব্যবসায়ীরাই দ্রুত স্থায়ী বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।

দীর্ঘ ৪০ বছরেও স্থায়ীভাবে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাটে কোন কাঁচাবাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বিংবা ইউনিয়ন পরিষদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে, ব্যবসায়ীরা সিডিএ সড়ক দখল করে ব্যবসা করতেন দিনের পর দিন।

উচ্ছেদের পর ব্যবসায়ীরা সিডিএ’র ওই নির্ধারিত স্থানে স্থায়ী বাজার নির্মাণ করার জন্য দাবি তুলেছেন। কেননা ওখানে স্থায়ী কোনো কাঁচাবাজার নেই। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের জায়গা দখল করে বসত মাছ ও তরিতরকারির দোকান। এতে অপ্রশস্ত সড়কগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সৃষ্ট যানজটে বেড়েছে পথচলতি মানুষের ভোগান্তি। এছাড়া চরপাথরঘাটায় নেই খেলার মাঠ।

কিন্তু একটি মহল সেখানে বাজার নির্মাণ করতেও গোপনে বিরোধিতা করবেন বলে বাজারের লোকজন জানান। কেননা তারা আসলে রাস্তার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা তোলেন। স্থায়ী বাজার হলে তাদের চাঁদা তোলা বন্ধ হবে তাই বিরোধিতা করবেন। এমন আশঙ্কা অনেকের।

স্থানীয়রা জানান, বাজার না থাকায় চরপাথরঘাটা ও চরলক্ষ্যার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার উচ্ছেদ করলেন সিডিএ, ক্ষতি হল ব্যবসায়ীর। উধাও হয়ে গেল পজিশন বিক্রি করা জমিদাররা।

পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান জাহেদ বলেন, বিনা নোটিশে সিডিএ’র অভিযানে এর আগেও অন্তত পাঁচ শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দিয়েছে। সিডিএর আকস্মিক অভিযান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘উচ্ছেদের বিষয়ে কোন তথ্য নেই। কোন চিঠি তিনি পাননি। কর্ণফুলী থানার ওসিও একই কথা জানান।

উচ্ছেদের বিষয়ে সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

বিবার্তা/জাহেদ/জবা