জামাইয়ের বিরুদ্ধে শ্বশুরের ধর্ষণ মামলা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১৭
জামাইয়ের বিরুদ্ধে শ্বশুরের ধর্ষণ মামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের পর জামাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দিয়েছেন শ্বশুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের এ ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এলাকায়। জানা যায়-কর্জ টাকা ফেরত চাওয়ায় শ্বশুর ক্ষিপ্ত হন জামাইয়ের ওপর। মেয়েকে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন জামাইয়ের বিরুদ্ধে।


অন্যদিকে জামাই শ্বশুরের কর্জ নেয়া ১৭ লাখ টাকা ফেরত পেতে লিগ্যাল নোটিশ এবং প্রতারণার অভিযোগ দিয়েছেন আদালতে। শ্বশুর বাড়িতে আটকে রাখা স্ত্রী উদ্ধারেও আদালতে আবেদন করেছেন জামাই।


বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপর ইউনিয়নের কালাছড়ার মো. ফুল মিয়ার মেয়ে ইসরাত জাহান জুইয়ের সাথে সরাইলের ফকিরমোড়া গ্রামের মোরাম মিয়ার ছেলে আবদুর রউফের পারিবারিক সম্মতিতে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে বিয়ে হয় এ বছরের ২৯ মে। এরপর মেয়ের বাবা ফুল মিয়ার উপস্থিতিতে কাজী অফিসে বিয়েটি রেজিস্ট্রি হয়। নিকাহনামাতেও ফুল মিয়ার স্বাক্ষর রয়েছে। বিয়েতে মোহরানা বাবদ ধার্য করা ১০ লাখ টাকার পুরোটাই নগদ উসুল দেখানো হয়েছে নিকাহনামায়।


আবদুর রউফ অভিযোগ করেন-মোহরানার ১০ লাখ টাকার পুরোটা নগদ পরিশোধের পর বাড়িতে বিল্ডিং করার জন্যে শ্বশুর ফুল মিয়া তার কাছ থেকে গত ১০ জুন আরো ১৭ লাখ টাকা ধার নেন।


এসময় পিত্রালয়ে থাকা তার স্ত্রী জুইকে কিছুদিনের মধ্যে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন ফুল মিয়া। পরবর্তীতে স্ত্রীকে ফেরত আনতে গেলে জুইয়ের মা শাহানা বেগম ও বড় বোন রোজিনা তাকে বাড়ি থেকে অপমান-অপদস্থ করে বের করে দেন। জুইয়ের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, তার কাছ থেকে নেয়া টাকার চেয়ে আরো বেশী টাকার বিনিময়ে তার স্ত্রীকে অবৈধভাবে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন শ্বশুর ফুল মিয়া ও শাশুড়ি শাহানা বেগম।


এই অবস্থায় ৩ আগস্ট লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এরপর স্ত্রীকে উদ্ধারে ৭ আগস্ট আদালতের শরণাপন্ন হন। এনিয়ে আদালতে যাওয়ায় গত ১০ আগস্ট সরাইলে রউফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে তাকে মারধর করতে উদ্যত হন শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় ওইদিনই নিরাপত্তাহীন হয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ১০৭ ধারার মামলা করেন। কর্জ টাকা ফেরত না দিয়ে হুমকি এবং টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলে ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে গত ২১আগষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দেন রউফ। ওই একই তারিখে ফুল মিয়া তার মেয়ে জুইকে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগ এনে জামাই আবদুর রউফসহ ৩জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলার আর্জিতে বলা হয় বড় ব্যবসায়ী ও অবিবাহিত পরিচয়ে প্রতারণা করে তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জনক রউফ। এরপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। মেয়ে নাবালিকা বলে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে গত ২৮ মে স্কুলে যাওয়ার পথে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় রউফ। পরে ৩ জন মিলে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়ে বিয়েতে রাজী করায়। এরপর কথিত বিয়ের নামে দিনের পরদিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে থাকে। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ফুল মিয়ার মেয়ে রোজিনা পুলিশ সদস্য হওয়ায় এ ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ করেন রউফ।


এদিকে সরজমিনে কালাছড়া গ্রামে গেলে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরহাদ আলী জানান, ওই ছেলে এক বছর ধরেই ফুল মিয়ার বাড়িতে নিয়মিত আসা যাওয়া এবং রাত্রিযাপন করতো। গ্রামের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে নানা কথাবার্তা চলতে থাকে। মাস তিনেক আগে ফুল মিয়া আমাকে এবং সাবেক ইউপি সদস্য হারিছ মিয়াকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে জানান কোর্টে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের ভিডিও দেখান। তার মেয়ে ক্লাশ নাইনে পড়ে, বিয়ের বয়স হয়নি বললে তিনি আমাকে বলেন কোর্টে সিস্টেম করেই বিয়ে দিয়েছি। শুনেছি জামাই নগদ ২৮-৩০ লাখ টাকা এবং ৮ ভরি স্বর্ণালংকার দিয়েছে। বিয়ের পর ৩ মাস সংসার করেছে। এখন ধর্ষণের মামলা কীভাবে হলো তা বুঝতে পারছি না।


ফুল মিয়া বলেন-যা হওয়ার হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা আছে। আমি কোন কথা বলব না। আমার মানসম্মান আছে। আমি কোর্টে মামলা করতেও রাজি ছিলাম না। ওরা আমার বিরুদ্ধে আগে মামলা করেছে বলে আমি করেছি।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো এবং আগুন দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার অন্যতম আসামি ফুল মিয়া। তার বিরুদ্ধে এই মামলায় চার্জশিট হয়।


বিবার্তা/নিয়ামুল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com