দৌলতপুরে পাটের দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে চাষী
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২২
দৌলতপুরে পাটের দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে চাষী
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়াতে চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে চাষীরা। বাজারে পাটের যে দাম তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গত দুই মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেলেও, এবার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পাট চাষীরা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। তাই পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষীরা।


পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পাট চাষে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরী ব্যায়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৪-১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৬ থেকে ৭ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৯০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।


বাজারে পাটের দাম পড়তির দিকে, গত বছর এ সময় পাটের দাম ছিল ২৪০০-২৫০০ টাকা মণ। এক বছরের ব্যবধানে পাটের দাম প্রতি মণে প্রায় এক হাজার টাকা কমেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষীরা।


জেলা কৃষি অফিস ও জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছরে ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৩৬ একর কম চাষ হয়েছে।


সিরাজুল ইসলাম নামের এক পাট চাষী বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যায়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ মণ। ১৭০০ টাকা দরে ৬ মণ পাট বিক্রি করে ১০ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে। আমার ৬ হাজার টাকা লোকসান। গত বছরের তুলনায় পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমার মতো সকল পাট চাষীর লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। এসম তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে ফসলে লোকসান সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দিবে কৃষক।


দৌলতপুর উপজেলার কয়েকজন পাট চাষী বলেন, পাট চাষ করে আমাদের পোষাচ্ছে না। পাটের দাম গত মৌসুমের অর্ধেক। সকল পাট চাষীর লোকসান হচ্ছে। বাজারে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। ব্যবসায়ীরা পাটের প্রতি তেমন আগ্রহী না। পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিক, দাম বৃদ্ধি করে দিক। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে আগামীতে অনেকেই পাট চাষ করা বন্ধ করে দিবে।


পাট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছরে কেনা পাট আজও গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী গত বছরের পাট বিক্রি করতে পারেনি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। পাট চাষী ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছে। কৃষকদের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছে না। গত বছরের চেয়ে দাম এ বছর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে৷


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহমুদ জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।


জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত মৌসুমে এ সময়ে প্রতিমণ পাটের দাম ছিল ২৫০০-২৬০০ টাকা। গত বছরের সেই পাট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাট ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে এবছরে পাটের গুণগত মানও তুলনামূলক কম। এবার পাট চাষীদের লোকসান হচ্ছে, দাম অনেক কম।


বিবার্তা/তুহিন/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com