রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে রতন কর্মকার নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ'লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের অফিসে তারই সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে নির্যাতন ও চাঁদা দাবি করে তার অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাতে এ ঘটনায় বালিয়াকান্দি থানায় রতন কর্মকার বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে নিজের স্বর্ণের দোকানে বসে ছিলেন রতন কর্মকার। এসময় ভাইস চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই বাবুল মন্ডল (৪৪), ইকরাম মোল্লা (৪৫), বাঁধন (৩৪) এসে রতন কর্মকারকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনিরের ব্যক্তিগত অফিসে ডেকে নিয়ে যান জরুরি আলাপের কথা বলে। তখন ভাইস চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাবুল মন্ডল স্বর্ণ ব্যবসায়ী রতন কর্মকারের কাছে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ইকরাম মোল্লা ও বাধন জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আগামী ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাঁদার টাকা পরিশোধ না করলে তার নির্মাণধীন বাড়ীতে থাকা ৪ হাজার ইট জোরপূর্বক নিয়ে যাবে। তখন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে রতন কর্মকারকে তারা এলোপাথাড়িভাবে কিল, ঘুষি, লাথি মেরে জখম করে। সে সময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তার পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। রতন কর্মকারের চিৎকারে তার ছেলে রনি কর্মকার সহ স্থানীয়রা গিয়ে রতনকে উদ্ধার করে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী রতন কর্মকার বলেন, গতকাল বিকালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের অফিসে তার সামনে তারই চাচাতো ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য বাবুল মন্ডল, ইকরাম, বাঁধন আমার কাছে চাঁদা দাবি করে নির্যাতন করে। চাঁদা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সে সময় আমার কাছে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে জোর করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আগামী ৪ তারিখের মধ্যে চাঁদার টাকা না দিলে আমার নির্মাণধীন বাড়ির ইট নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। আগেও তারা আমার কাছ থেকে একাধিক বার টাকা নিয়েছেন। আমি হিন্দু মানুষ বলে এভাবে নির্যাতন করে। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে ভয়ে আছি। যার কারণে আমি থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগে করেছি।
ভাইস চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই বাবুল মন্ডল বলেন, আমি নিজে রতন কর্মকারের কাছে কিছু টাকা পাবো। সেই টাকার বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের ওখানে যাই। তখন শালিসে এ বিষয়টি মিমাংসা হয়। তার কাছে কিসের টাকা পাবেন জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবো বলে ফোন ফোন কেটে দেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির তার অফিসে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছে রতন কর্মকার। মূলত রতন কর্মকার নেশাগ্রস্থ। এছাড়া সে স্বর্ণ ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে চড়া সুদ নেয়। আবার অনেক সময় স্বর্ণ ফেরতও দেয় না। কিছুদিন আগে রতন কর্মকার জমি কিনে রাতের অন্ধকারে ঘর তুলতে যায়। পরদিন সকালে তার প্রতিবেশী বালিয়াকান্দি কলেজের সিরাজ স্যার আমাদেরকে ডাকে। পরবর্তীতে আমরা সরজমিনে গিয়ে তাদের জমি বুঝিয়ে দেই। পরে আবার তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। গতকাল বিষয়টি আমি সামাজিক ভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু সে এখান থেকে গিয়ে এই মিথ্যা অভিযোগ করে থানায় অভিযোগ করেছে। আমার অফিসে তখন অনেক লোক ছিলে, চাঁদা দাবি করে কাউকে কোন নির্যাতন করা হয় নাই।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে রাতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে টাকা পয়সা নিয়ে আগে থেকেই ঝামেলা ছিল। আর সম্প্রতি রতন একটি বাড়ি নির্মাণ করছে। সেখানেও ঝামেলা হয়েছে। তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে।
বিবার্তা/মিঠুন/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]