রাজশাহীতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অভিযোগ
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৪
রাজশাহীতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অভিযোগ
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি নির্মাণ কাজ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। চলমান কাজ নিম্নমানের হবার কারণে গত ২৯ আগস্ট স্থানীয়রা জোড়পূর্বক কাজ বন্ধ করে গণমাধ্যম কর্মীদের খবর দেন। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মালেকা খাতুন। ঐদিন সকালেই তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাহিদাকে বিষয়টি অবগত করেন। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এই অনিয়মের বিষয়ে আমি আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেছি।


প্রধান শিক্ষকের জন্য বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় টয়লেট সহ একটি কক্ষ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। সামান্য এই কাজের জন্য এতো বড় অংকের বাজেট নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি কলামে সিমেন্ট ও বালুর আনুপাতিক হার মাত্র ১/৪। এছাড়াও যে খোয়াগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও তিন নাম্বার ইটের। এছাড়াও খোয়াগুলোর নিচের অংশে রয়েছে সুড়কি। যেগুলো ঢালাইকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিদ্যালয়টির একজন দাপ্তরিক এই অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কাজটি চলমান রয়েছে।


কাজ শুরু করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একজন প্রকৌশলী সরেজমিনে উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও শুক্রবার বন্ধেরদিন ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কলাম নির্মাণ কাজ শুরু করেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয়রা। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত শুক্রবার ২৫ আগস্ট প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করে বলেন, বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার আংশিক কাজ শুরু হয়েছে। আপনি একটু গিয়ে দেখে আসেন। সে মোতাবেক আমি স্কুলে গিয়ে দেখি মিস্ত্রিরা কাজ করছে। ব্যস্ততার কারণে স্কুলের একজন প্রহরীকে কাজ দেখার দায়িত্ব দিয়ে আমি চলে আসি। ভবনটির পুরাতন রডগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে ঠিকাদার বলেন, সিডিউলে পুরাতন কর্তনের কথা উল্লেখ আছে। তাই আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেদকের হাতে আসা সিডিউল তেমন কোন কিছু উল্লেখ্য নেই।


কাজের এই অনিয়মের কথা নিয়োজিত মিস্ত্রিরাও অকোপটে স্বীকার করেন। স্থানীয়রা প্রতিবেদককে নিয়ে স্কুলের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে প্রত্যক্ষভাবে নিম্নমান কাজের প্রমাণ দেখান। নির্মিত পিলারগুলো ছোট্ট হাতুড়ের হালকা আঘাতেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রতিটি পিলারে নিম্নমানের খোয়া ও অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ব্যবহারের সত্যতাও মেলে। স্থানীয় গ্রামবাসি ও ঐ বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক জানান, ছয় বস্তা বালুর সাথে মাত্র একবস্তা সিমেন্ট দিয়ে এই নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়দের দেয়া বাঁধার কারণে নির্মাণকাজ যেনো মানসম্পন্ন হয় সেলক্ষ্যে গতকাল ৩০ আগস্ট ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির এক জরুরী সভার আয়োজন করা হয় বলে নিশ্চত করেন সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু। কাজের মান যেনো ভাল হয় সেলক্ষ্যেই এই সভা আয়োজন বলে জানান তিনি।


প্রধান শিক্ষক প্রতিবেদককে বলেন, ঢালাইজাতীয় কাজ করার পর সেগুলো কেনো পানি দিয়ে ভেজানো হচ্ছেনা। কিংবা ভেজা চটের বস্তা দিয়ে কেনো ঢেকে রাখা হচ্ছে না জানতে চাইলে ঠিকাদার আমার সাথে অসদাচরণ করেন। কাজের সার্বিক বিষয়ে ঠিকাদার আওয়ালকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমি ইউএনও স্যারকে এই অনিয়মের বিষয়ে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com