সাভারে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৫:১৫
সাভারে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা
সাভার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের বড় বড়দেশী মৌজায় অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কয়লা তৈরির বিশেষ ধরনের চুলা। এতে একদিকে, যেমন বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি সৃষ্ট ধোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে শ্বাসজনিত নানা ব্যাধি। অপরদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।


সরেজমিন দেখা গেছে, আমিনবাজার ইউনিয়নের বড় বড়দেশী মৌজায় কয়েকজন গাছ খেকো ব্যক্তি দিন রাত অবৈধ চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লার কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে সেখানে। বিধিনিষেধ থাকার পরও এখানে ফসলি জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। শক্ত কাঁচা লাল মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে শতশত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যা দেখার যেন কেউ নেই।


কয়লা শ্রমিকরা জানায়, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়।
প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার কয়েক’শ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে সাত থেকে আট দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চটের বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকঅ্যাপসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হোটেলে পাঠানো হয়।


এলাকাবাসীরা জানায়, একটি চুল্লিতে এক সপ্তাহে কমপক্ষে কয়েক’শ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি বস্তা কয়লা এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।


তারা আরও জানান, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। নিয়মিত এই বিশাল পরিমাণের গাছ, গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানোর ফলে খুবই দ্রুতই ওই এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিসহ নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সচেতন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবগত হয়েও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।


কয়েকজন যুবক জানান, চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, খুশখুশে কাশি হয়। এবিষয়ে অবৈধ এসব কারখানার মালিকরা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও তারা বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এসব অবৈধ কারখানায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন প্রকাশ্যে তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।


এবিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, অবৈধ কয়লার কারখানা বন্ধসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/শরিফুল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com